ভারত পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে জইশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তইবার সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ শিবিরে নিখুঁত হামলা চালিয়েছে। ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামের এই ত্রিবাহিনী অভিযানটি রাতে পরিচালিত হয় এবং এতে একসঙ্গে নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করে আঘাত হানা হয়। ভারতের এই সামরিক পদক্ষেপটি ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পাহলগামে সংঘটিত ভয়াবহ জঙ্গি হামলার জবাবে নেওয়া হয়, যেখানে ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন—এদের বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক।
সরকার পাকিস্তানি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পাওয়া কিছু ভিডিওচিত্র প্রকাশ করেছে। এক ভিডিওতে দেখা যায়—রাতের আঁধারে একটি ব্যস্ত রাস্তায় বহু মানুষ, অনেকেই মোটরসাইকেলে, জড়ো হয়েছে। দূরে আকাশে কমলা রঙের আলো আর ধোঁয়ার কুন্ডলি।
এর কিছুক্ষণ পর শোনা যায় একটি বাঁশির মতো শব্দ—এরপরই একটি বিশাল বিস্ফোরণ। ধারণা করা হচ্ছে, এটি ভারতের এসসিএএলপি (SCALP) লং-রেঞ্জ মিসাইল অথবা হ্যামার (Hammer) স্ট্যান্ড-অফ স্মার্ট বোমা ছিল। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ভিডিও ধারণকারী ব্যক্তি কেঁপে ওঠেন।
এরপরই আকাশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে কমলা আগুনের বিশাল গোলা এবং ধোঁয়া, চারপাশে শোনা যায় আরবি প্রার্থনার শব্দ ও আতঙ্কিত মানুষের চিৎকার।
আরেকটি ভিডিও গাড়ির ড্যাশবোর্ড থেকে তোলা—গাড়িটি পুলিশের চেকপোস্ট পার হচ্ছে। ড্রাইভার ও যাত্রীর কথোপকথনের মধ্যেই একজন যখন ‘বোমা’ শব্দটি বলেন, তখনই দূরে দ্বিতীয় একটি বিস্ফোরণ হয় এবং আবার দেখা যায় ভয়াবহ কমলা আগুনের গোলা।
‘অপারেশন সিন্দুর’-এ ভারত কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছে?
ভারতীয় সেনাবাহিনী এই অভিযানে ব্যবহার করেছে বিভিন্ন উচ্চপ্রযুক্তির অস্ত্র, যেমন—SCALP নামের দূরপাল্লার, আকাশ থেকে ছোঁড়া ক্রুজ মিসাইল এবং হ্যামার নামের স্মার্ট বোমা, যেগুলো বিশেষভাবে শক্তিশালী বাংকার ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়।
এছাড়াও ব্যবহার করা হয়েছে ‘লোইটারিং মিউনিশন’—ড্রোনবাহিত বিস্ফোরক, যেগুলো লক্ষ্যবস্তুর ওপর ঘোরাফেরা করতে পারে এবং স্বয়ংক্রিয় বা মানবনিয়ন্ত্রিতভাবে হামলা চালাতে পারে।
ভারত কোন সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালিয়েছে?
রাত ১টা ৪৪ মিনিটে চালানো এই নিখুঁত হামলাগুলো লক্ষ করেছিল জইশ-ই-মোহাম্মদ, লস্কর-ই-তইবা এবং হিজবুল মুজাহিদিনের ঘাঁটি—যারা অতীতে মুম্বাইয়ের ২৬/১১ এবং ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার মতো বড় হামলা চালিয়েছে।
লস্করের একটি শাখা সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ পাহলগাম হামলার দায় স্বীকার করেছে।
ভারত আগেই জানিয়েছিল, তাদের কাছে প্রমাণ আছে—যা গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ইউরোপীয় দেশগুলোর কূটনীতিকদের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে—যে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাই পাহলগামের হামলার পরিকল্পনাকারী।
পাকিস্তান ও ভারতের প্রাণহানি
ভারতের হামলার কয়েক ঘণ্টা পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী এলওসি এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর ‘এলোপাথাড়ি ও নির্বিচারে’ গুলি ও মর্টার ছোঁড়ে। এতে তিনজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন।
ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, তারা ‘প্রতিসম জবাব’ দিয়েছে এবং এতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীও হতাহত হয়েছে।