Site icon আজকের কাগজ

ভারত-পাকিস্তান সংঘাত: সীমিত হামলার জটিল হিসাব

ভারত-পাকিস্তান সংঘাত

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে জম্মু ও কাশ্মীরে হামলার পর নয়াদিল্লি প্রায়শই এর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। এরপর ভারতের গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুদ্ধের উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে। অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের উপস্থিতিতে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে যুদ্ধের আহ্বান জানানো হয়। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের আমলে এই উন্মাদনা নতুন মাত্রা পেয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ভারত থেকে পাকিস্তানকে শাস্তি দেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে। যদিও কেউ কেউ দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার বিপক্ষে সতর্ক বার্তা দিচ্ছেন, তবুও সীমিত হামলা চালানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে, সীমিত হামলা যে সীমাবদ্ধই থাকবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। অনেক সময় ভুল হিসাব থেকেই যুদ্ধ শুরু হতে দেখা গেছে।

পারমাণবিক অস্ত্রের জটিল সমীকরণ

ভারতের যেকোনো সামরিক অভিযানের হিসাবকে আরও জটিল করে তোলে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র। পাকিস্তান প্রথমেই পারমাণবিক হামলা চালাবে না, তবে তাদের এই সক্ষমতা আক্রমণকারীদের চিন্তায় রাখতে হয়। ২০০১–০২ সালের সংকটের পর ভারত পারমাণবিক হামলা এড়িয়ে কিভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া যায়, সেই নীতি অনুসরণ করে আসছে। এই ধারণা থেকেই ‘সীমিত যুদ্ধের’ কৌশল সামনে এসেছে।

সীমিত যুদ্ধ দুই ধরনের হতে পারে। এক ধরনের যুদ্ধে পরাশক্তি সরাসরি মুখোমুখি না হয়ে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সংঘাত করে। আরেকটি হলো, পূর্ণমাত্রায় না গিয়ে সীমিত আকারে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার। তবে এই ধরনের যুদ্ধে উভয় পক্ষেই ব্যাপক প্রাণহানির ঝুঁকি থাকে।

ভারতের সম্ভাব্য কৌশল

ভারত মূলত সীমিত আকারে প্রচলিত সামরিক হামলা চালাতে চায়। তাদের লক্ষ্য, পাকিস্তানকে শাস্তি দেওয়া এবং সেই সঙ্গে সংঘাত এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাতে পারমাণবিক হামলার পর্যায়ে না পৌঁছায়। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ও ব্রিটিশ কৌশলবিদদের মতে, এটি সম্ভব। এতে ভারত নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে সক্ষম হবে এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সমর্থনও পাবে।

ভারতের প্রচলিত সামরিক শক্তি পাকিস্তানের তুলনায় এগিয়ে থাকায় সীমিত সামরিক হামলা চালানো তাদের জন্য তুলনামূলক সহজ। উপরন্তু, কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানকে দোষারোপ করে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করার কূটনৈতিক সক্ষমতাও ভারতের রয়েছে।

সংঘাতের বিস্তার ও ঝুঁকি

যদিও ভারতের সীমিত হামলা পাকিস্তানকে বিপর্যস্ত করতে পারে, প্রতিশোধ নেওয়া তাদের জন্য কঠিন হবে। কারণ, প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে গেলে বড় ধরনের যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হবে, যা পাকিস্তানের জন্য সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জিং। ফলে, সংঘাত আরও বাড়ানোর পথে পাকিস্তান না-ও এগোতে পারে। তবে, পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে এই সীমিত যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত সীমিত থাকবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। উভয় পক্ষই নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চাইলে সংঘাত আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।

তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়া দুই দেশের মধ্যকার এই সংঘাত থামানোর উপায়ও সীমিত। আর যখন দুটি পক্ষই নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে অটল থাকে, তখন যুদ্ধ পরিকল্পনার হিসাব-নিকাশ ভেস্তে যেতে পারে।

Exit mobile version