বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৫০ লাখ মানুষ চিকিৎসা ব্যয়ের ভার সহ্য করতে না পেরে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম।
রোববার (৪ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরোসার্জনস (বিএসএনএস)-এর তিন দিনব্যাপী চতুর্থ অন্তর্বর্তী সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এই আশঙ্কাজনক তথ্য তুলে ধরেন।
চিকিৎসার খরচই দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ
উপাচার্য বলেন, “স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যয় সাধারণ মানুষের জন্য বড় ধরনের চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ মানুষ চিকিৎসার জন্য ঋণ নিতে বাধ্য হন এবং পরে সেই ঋণ শোধ করতে গিয়ে জমিজমা বিক্রি করে দেন। কেউ কেউ তো চিকিৎসা শেষ করতে না পারার আগেই আর্থিক দিক থেকে চূড়ান্ত বিপর্যয়ের মুখে পড়েন।”
তিনি আরও বলেন, “অনেক রোগী দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে অন্য মৌলিক চাহিদা—খাদ্য, শিক্ষা, বাসস্থান ইত্যাদির ক্ষেত্রেও ব্যর্থ হচ্ছেন। ফলে তারা অর্থনৈতিকভাবে আরও বেশি ঝুঁকিতে পড়ছেন।”
ব্যবস্থাপনার ঘাটতি বাড়াচ্ছে সংকট
উপাচার্য ডা. শাহিনুল আলম উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা টেনে বলেন, “উন্নত দেশে প্রযুক্তি বেশি হলেও রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। কিন্তু আমাদের দেশে রোগীর অভাব নেই, আর ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতার ঘাটতি এই সংকট আরও বাড়িয়ে তুলেছে।”
তিনি রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, স্বাস্থ্য খাতে গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে একটি সুনির্দিষ্ট ও যুগোপযোগী রূপরেখা গ্রহণ করার জন্য। “জনসংখ্যা যখন ক্রমেই বাড়ছে, তখন স্বাস্থ্যসেবার মান ও পরিসর বাড়াতে আধুনিক অবকাঠামো এবং বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা অত্যাবশ্যক,”— বলেন উপাচার্য।
সমাধানে চাই স্বাস্থ্যবিমা ও রাষ্ট্রীয় সহায়তা
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারাও স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেন।
তারা বলেন, “সবার জন্য সহজলভ্য স্বাস্থ্যবিমা চালু করা, দরিদ্র মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় সহায়তা বৃদ্ধি, এবং সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।”
তিন দিনব্যাপী সভায় আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির প্রদর্শনী
বিএসএনএস আয়োজিত এই সম্মেলনে দেশে-বিদেশে খ্যাতনামা ৩০০ জনেরও বেশি নিউরোসার্জন অংশগ্রহণ করেন। তিন দিনের কর্মসূচিতে বৈজ্ঞানিক আলোচনা, লাইভ সার্জারি, থ্রিডি অ্যানাটমি সেশন এবং অ্যান্ডোভাস্কুলার সিমুলেশন কর্মশালার মতো আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর বিস্তারিত আলোচনা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন, বিএসএনএস-এর আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদুল হক, সদস্য সচিব ডা. মো. নুরুজ্জামান খান এবং বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. মাঈনুল হক সরকার।
এই উদ্বেগজনক চিত্র স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেয়, দেশের স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান কাঠামো কতটা অস্থির ও সংকটাপন্ন। জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বাস্থ্যসেবাকে নিশ্চিত করতে হলে অবকাঠামো, মানবসম্পদ, এবং অর্থনৈতিক সহায়তার দিক থেকে বড় ধরনের সংস্কার এখন সময়ের দাবি।