Site icon আজকের কাগজ

তরমুজের ভরা মৌসুমে রাস্তা খুঁড়ে কালভার্ট নির্মাণে বিপাকে চাষিরা

তরমুজের ভরা মৌসুমে রাস্তা খুঁড়ে কালভার্ট


মরশেদ, খুলনাঃ খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গড়ইখালীতে তরমুজের ভরা মৌসুমে কালভার্ট নির্মাণ কাজের নামে রাস্তা খুড়ে কাজ না করায় তরমুজ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য সরবরাহ যানবাহন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এলাকার তরমুজ চাষিরা। অপরদিকে যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী। এলাকার উৎপাদিত তরমুজ সরবরাহ শেষে প্রশস্ত করে বিকল্প রাস্তা করার মাধ্যমে  কালভার্ট নির্মাণ কাজ শুরু করলে কোন ক্ষতি এবং ভোগান্তী হতো না এবং সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যের একক সিদ্ধান্তের কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। এদিকে বৃহৎ এলাকার পানি নিষ্কাশন ও জলাবদ্ধতা নিরসনে কালভার্ট নির্মাণ করা ও জরুরি বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য আয়ুব আলী সরদার।

উল্লেখ্য, প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও রবি মৌসুমে উপজেলার গড়ইখালী ইউনিয়নের বাইনবাড়িয়া ও কুমখালীসহ অত্র ইউনিয়নে বিপুল পরিমাণ তরমুজসহ বিভিন্ন সবজি উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদিত তরমুজ বর্তমানে সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। পাইকার এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সরাসরি ক্ষেত থেকে ট্রাক, পিকআপ এবং ট্রলিসহ যানবাহনের মাধ্যমে নিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। সরবরাহ মৌসুমের এমন সময়ে বিকল্প ব্যবস্থা না করে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে খোঁয়াড় তুমি করে ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আয়ুব আলী সরদার ইউনিয়নের শান্তা কুমখালী বাইনবাড়িয়া সড়কের উত্তর কুমখালী খাল ও ঘোলখালী বদ্ধ নদীর সংযোগ স্থলে কালভার্ট নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের কাবিটা প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা ব্যায়ে কালভার্ট টি নির্মাণ করা হচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইউপি সদস্য আয়ুব আলী সরদার এলাকাবাসীকে অবহিত না করে  তরমুজ সরবরাহ মৌসুমে কালভার্ট নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন।

হান্নান বিশ্বাস বলেন, এখনো এলাকার বহু কৃষকের ক্ষেতে তরমুজ রয়েছে এমন সময় নির্মাণ কাজ শুরু না করে কিছুদিন পরে শুরু করলে আমাদের কোন আপত্তি থাকতো না।

সেলিম বিশ্বাস বলেন, বলেন কালভার্ট নির্মাণের জন্য যে রাস্তা কেটে ফেলে রাখা হয়েছে এই রাস্তা দিয়ে এলাকার শত-শত কৃষকের তরমুজ সরবরাহ হয়ে থাকে। যানবাহন চলাচল উপযোগী বিকল্প সড়ক নির্মাণ না করে রাস্তা কেটে ফেলায় সরবরাহ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তরমুজ চাষী ও ব্যবসায়ীরা। একইভাবে যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন যানবাহন চালকরা।

নাসিমন ও ভ্যান চালক রবিউল ইসলাম এবং জিন্নাত ফকির বলেন, যেনতেনভাবে বিকল্প রাস্তা করা হয়েছে। এ কারণে নসিমন এবং ভ্যান তার উপর দিয়ে চলতে পারছে না। উত্তর

কুমখালী গ্রামের সুকেশ মন্ডল বলেন, মূল রাস্তা কেটে ফেলে রাখায় আমার এবং ব্রজেশ্বর এর বসতবাড়ির মধ্য দিয়ে তরমুজবাহী সকল যানবাহন চলাচল করছে। আমরা নিষেধ করলে আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

গৃহবধূ ভক্তিসানা ও শম্পা মন্ডল বলেন, বসতবাড়ির উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করায় ধূলোবালির কারণে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। শিশু এবং বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

সাবেক ইউপি সদস্য শাহাবুদ্দীন গাইন বলেন, কালভার্ট নির্মাণ প্রয়োজন রয়েছে তবে সেটা কৃষকের ক্ষতি এবং এলাকাবাসী কে ভোগান্তিতে ফেলে নয়।

এ প্রসঙ্গে ইউপি সদস্য আয়ুব আলী সরদার বলেন, বৃহৎ এলাকার পানি সরানোর একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে এই কালভার্টটি। এটি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে গেলে অনেক চেষ্টা করে পুনঃনির্মাণের জন্য একটি বরাদ্দ পাওয়া যায়। কালভার্টটি অনেক আগেই নির্মাণের কথা ছিল কিন্তু এলাকার তরমুজ চাষিদের কথা বিবেচনা করে দেরিতে শুরু করা হয়েছে। বিশেষ করে কালভার্ট সংলগ্ন ঘোষখালী নদীর উপর একটি ছোট দুর্বল বাঁধ রয়েছে। বাঁধটি এর মধ্যে ভেঙেও যায়, যা সাথে-সাথে মেরামত করা হয়। বাঁধ ভেঙে নদীতে পানি উঠে গেলে এ বছর আর কালভার্ট নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। এজন্য কালভার্ট নির্মাণ কাজ শুরু করা জরুরি হয়ে পড়ে। বিকল্প রাস্তাটি মজবুত করা হবে এবং যাদের বাড়ির ভিতর দিয়ে তরমুজবাহী যানবাহন চলাচল করছে তাদের বিষয়টি মানবিকভাবে দেখা হবে বলে তিনি জানান।

তরমুজ চাষিদের যাতে ক্ষতি না হয় এবং সাধারণ মানুষের যাতে কোন ভোগান্তি না হয় সেদিকে লক্ষ রেখেই কালভার্ট নির্মাণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যদের বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান জিএম আব্দুস সালাম কেরু।

তরমুজ সরবরাহ ও বাজারজাত কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে এক সপ্তাহ পর নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন।

একগুঁয়েমি ইউপি সদস্যের সারা বছর কালভার্ট নির্মাণের সময় হয়নি। কালভার্ট নির্মাণ কাজের সময়সীমা এ মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও এই কয়দিনের মধ্যে কিভাবে সম্পন্ন করবেন বলে স্থানীয়রা আঙুল তুলেছেন ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।

জনদুর্ভোগ এড়িতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

Exit mobile version