উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভাবে বেড়েছে কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজের চাষ। বিগত কয়েক বছর ধরে ভালো ফলন হওয়ায় এবার অধিক মুনাফার আশায় বাণিজ্যিকভাবে এই আবাদে ঝুঁকেছেন জেলার কৃষকরা। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ করে ৩-৪ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তারা। কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৫ কোটি টাকার পেঁয়াজ বীজ বিক্রি সম্ভব।

সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের বুড়িরবান এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠ সাদা পেঁয়াজ ফুলে ছেয়ে আছে। কৃষক ও শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ বছর মৌমাছির আনাগোনা কম থাকায়, ফলনের জন্য কৃষকরা হাত দিয়েই পরাগায়নের কাজ করছেন।
জানা গেছে, গত বছর জেলায় ১২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হলেও এবার তা বেড়ে ২১ হেক্টরে পৌঁছেছে। নতুন উদ্যোক্তা ও কৃষকদের আগ্রহে এটি সম্ভব হয়েছে। তবে মৌমাছি কম থাকায় পরাগায়নে কিছুটা শ্রম বেশি লাগছে।
স্থানীয় কৃষক সংকর রায় মানিক জানান, তিনি এবার ৬ একর জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ করেছেন। জানালেন, আলু ও অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে বর্তমানে সময়োপযোগী বলে পেঁয়াজ বীজ চাষে ঝুঁকেছেন। নভেম্বরের শেষ দিকে বীজ রোপণ করেন এবং এপ্রিল মাসজুড়ে উত্তোলন হবে। তার মতে, ২০-২২ লাখ টাকা খরচ হলেও ৬০ লাখ টাকার বেশি আয় সম্ভব। তাহেরপুরী ও ফরিদপুরী জাতের বীজ আবাদ করেছেন তিনি।
পেঁয়াজ বীজ ক্ষেতে কাজ করছেন স্থানীয় শ্রমিক মলিন চন্দ্র রায় ও বাসন্তী রানি। তারা জানান, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩-৪টা পর্যন্ত হাত দিয়ে পরাগায়নের কাজ করেন। এতে বীজের ফলন ভালো হয় এবং আয় দিয়ে সংসার চালাতে সুবিধা হচ্ছে।
বীজের টেকনিশিয়ান ভুবেন চন্দ্র রায় বলেন, সাধারণত মৌমাছির মাধ্যমে পরাগায়ন হয়। তবে কীটনাশকের কারণে মৌমাছি কমছে। তাই কৃষকরা প্রতিদিন নিজ হাতে পরাগায়নের কাজ করছেন।
পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) সাইফুল ইসলাম জানান, গত বছর যেখানে ১২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ হয়েছিল, এবার তা বেড়ে হয়েছে ২১ হেক্টর। এতে প্রায় ৫ কোটি টাকার বীজ বিক্রি সম্ভব। তিনি জানান, কৃষকদের পেঁয়াজ বীজ চাষে আরও বেশি আগ্রহী করা গেলে দেশীয় উৎপাদন বাড়বে এবং আমদানি নির্ভরতা কমবে।