রোকুনুজ্জামান, জবি : রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকায় মোঃ সোহাগ নামের এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে চাঁদা না দেওয়ায় নৃশংসভাবে পিটিয়ে ও পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যার প্রতিবাদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থী ফোরামের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১২ জুলাই) পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে শুরু হয়ে লক্ষ্মীবাজার প্রদক্ষিণ শেষে আবার পার্কে এসে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি শেষ হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জবি শাখার সভাপতি ইভান তাহসীব বলেন, “এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব ছিল জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু আমরা দেখছি, গুম, খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও দমন-পীড়নের যে সংস্কৃতি স্বৈরাচার হাসিনা সরকার রেখে গিয়েছিল, তা এখনো অব্যাহত। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে সরকার বের হতে পারেনি।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ছাত্র ও জনতার সঙ্গে একটি অলিখিত চুক্তি হয়েছিল যে, আর কখনো শোষণ-নিপীড়ন সহ্য করা হবে না। কিন্তু বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠন বারবার সেই চুক্তি ভঙ্গ করেছে। ৯ জুলাইয়ের ঘটনার পর বহিষ্কারই যথেষ্ট নয়, অপরাধীদের আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।”
উক্ত প্রতিবাদ সভার বক্তব্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ কামরুল হাসান বলেন, “পুরো দেশের মানুষের হৃদয়ে রক্ত-ক্ষরণ করা এমন হিতাহিত বিবেক-জ্ঞান বিবর্জিত ঘটনা গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে কোনোভাবেই কাম্য না। এটি অনাকাঙ্খিত, অপ্রত্যাশিত এবং আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। ৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় এরকম নির্মম হত্যাকাণ্ড আমরা দেখবো তা আমরা স্বপ্নেও চিন্তা করিনি। বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীসহ আপামর জনতার বিবেক জগ্রত হয়ে গেছে। আমাদের মাঝে আবার জুলাই ফিরে এসেছে। তাই আমরা সেই কতিপয় সন্ত্রাসীদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এই বাংলাদেশ ৫ই আগস্ট পরবর্তী একটি নতুন বাংলাদেশ। জুলাইয়ের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার কর্মজীবী মানুষ মৃত্যুকে ভয় পাওয়া ভুলে গিয়েছি। তাই এই নতুন বাংলাদেশে কোনো অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি
ও চাঁদাবাজের ঠাই আমরা হতে দেবো না।”
প্রতিবাদ সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুল আলম মারুফ বলেন, “ঢাবিতে তোফাজ্জল হত্যা থেকে শুরু করে মিটফোর্ডের সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড সবই প্রমাণ করে, দেশের বিচার ও রাজনৈতিক সংস্কার এখনো হয়নি। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসে রাজনৈতিক সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করে তারা জনগণের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী।”
তিনি আরো হুঁশিয়ারিঊ দিয়ে বলেন, “আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতেও যদি অন্যরা সেই একই ধারাবাহিকতা বজায় রাখে, তবে প্রকৃত পরিবর্তন আসবে না। তাই এখন সময় ব্যবস্থা বদলের।”
এই প্রতিবাদ মিছিলটি শুধুমাত্র একটি ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়, বরং সামগ্রিকভাবে দেশে চলমান সহিংসতা, বিচারহীনতা এবং রাজনৈতিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণের একাত্ম প্রতিবাদ এমনটাই প্রতীয়মান হয় শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে।