জেমস আব্দুর রহিম রানা, যশোর : আইনি জটিলতায় দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে যশোরের টেকাসেতুর নির্মাণ কাজ। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে দুই উপজেলার লক্ষ লক্ষ মানুষ। যশোরের মনিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার সীমান্তবর্তী টেকারঘাটে অবস্থিত এই সেতুটি দিয়ে দুই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিকিয়ে রাখতে ১৯৮০ দশকে টেকা নদীর উপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। দীর্ঘদিনের সেই পুরাতন সেতু ভেঙে ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর একই স্থানে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। সেতু নির্মাণ কাজ চলমান থাকা অবস্থায় সেতুর উচ্চতা কম থাকায় এবং নদীবন্দর কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র না থাকার কারণে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা, বিপ্লবী কমিউনিষ্ট লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন। যথাযথ নিয়ম মেনে কাজ করতে হাইকোর্ট নির্দেশনা জারি করেন। যে কারণে ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দেয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, টেকা সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডসহ কোনো মালামাল সেখানে নেই । অসমাপ্ত সেতুর পাশে একটি কাঠের তৈরি বিকল্প সেতু দিয়ে ছোট যানবাহন ও মানুষ ঝুকি নিয়ে চলাচল করছে। যে কোন মুহুর্তে সেতুটি ভেঙ্গে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে ।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৮ কোটি ৫৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে দরপত্র আহবান করা হয়। কাজটি সাড়ে ১১ ভাগ নিম্নদরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ (প্রা:) লি: এবং শামীম এন্টার প্রাইজ (জেভি) কাজটি পায়। কাজটি ৭ কোটি ৫৭ লাখ ২৮ হাজার ৫০৭ টাকায় চুক্তি করেন। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর কাজটি শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু কাজ যথা সময়ে শেষ না হওয়ায় ২০২৪ সালে ১৯ জানুয়ারী পর্যন্ত সময় বর্ধন করা হয়। সুত্র আরো জানায় সেতুর কাজটি প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ঠিকাদারকে এ পর্যন্ত ৬ কোটি ৩৪ লাখ ২২ হাজার ৩১৭ টাকা বিল প্রদান করা হয়েছে ।
সেতু সংলগ্ন টেকেরেঘাট বাজারের ঔষধ বিক্রেতা দেবু চন্দ্র দাস জানান, আইনি জটিলতায় সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছ। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে দুই উপজেলার মানুষ। সেতু চালু থাকার সময়ে আমার দোকানে ভাল বিক্রি হতো। এখন একেবারে কম হচ্ছে। এভাবে চললে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়বে। পাঁচাকড়ি গ্রামের ইজিবাইক চালক কেরামত আলী গাজী ক্ষোভের সাথে বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ ব্রীজ নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে । আমরা যাত্রী নিয়ে বিকল্প পথে চলাচল করি জীবনের ঝুকি নিয়ে। ওই পথে আসার পর যাত্রী নামিয়ে পার হতে হয়। যেকোন মুহুর্তে কাঠের তৈরী বিকল্প ব্রীজটি ভেঙ্গে যেতে পারে ।
অভয়নগর উপজেলার পায়রা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো: ফিরোজ আলম বলেন, সেতু নির্মাণের সময় যাতায়াতের সুবিধার্থে একটি বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা হয় যা অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় ঝুকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। বর্তমানে বিকল্প সেতুটি খুবই ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
মনিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আক্তার ফারুক মিন্টু জানান, সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় দুই উপজেলার বাসিন্দাদের সীমাহীন কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার জন্য ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি।
রিটকারী ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ছয় মাসের মধ্যে উচ্চতা ও প্রশস্ততা বৃদ্ধি করে কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। আদালতের দেওয়া সময় শেষ হয়ে গেছে। অথচ এলজিইডি কিছুই করেনি। এখন এলজিইডি হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ (প্রা:) লি: এবং শামীম এন্টার প্রাইজের (জেভি) প্রতিনিধি মো: মতিয়ার রহমান জানান, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় কাজ বন্ধ রয়েছে। নির্দেশ পেলে কাজ শুরু করবো। মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না জানান, শুনেছি মামলা হয়েছে সে কারণে কাজ বন্ধ আছে। মামলা শেষ না হলে কিছু বলা যাচ্ছে না । যশোর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাহবুবুর রহমান বলেন, মামলা জনিত কারণে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছ । সমস্যার সমাধান হলে পুনরায় সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে।