Thursday, August 21
Shadow

মাদকের ভয়াল থাবা কেড়ে নিচ্ছে কিশোরদের ভবিষ্যৎ

স্বপন বিশ্বাস


বাংলাদেশে আজ নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে এক ভয়ঙ্কর মহামারি—মাদক। এর সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে কিশোর প্রজন্ম। যে বয়সে তাদের বই-খাতা হাতে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে কথা, মাঠে খেলাধুলা করতে কথা, দেশ গড়ার স্বপ্ন আঁকতে কথা—সে বয়সেই তারা ডুবে যাচ্ছে মাদকের অন্ধকারে। প্রতিদিন অগণিত কিশোর হারিয়ে যাচ্ছে এই ভয়াল নেশার ছোবলে।
কেন ঝুঁকছে কিশোররা?
কিশোরদের মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ার পেছনে রয়েছে নানা কারণ।
বন্ধু মহলের প্রভাব এবং কৌতূহল
পারিবারিক অশান্তি ও অবহেলা
খেলাধুলার মাঠ হারিয়ে যাওয়া, অবসর সময়ের অপব্যবহার
মাদকের সহজলভ্যতা ও নিয়ন্ত্রণহীনতা
এই সবগুলো মিলেই কিশোররা বিপথে যাচ্ছে, হারাচ্ছে ভবিষ্যতের আলো।
ভয়াবহ প্রভাব
মাদক একবার জীবনে প্রবেশ করলে তা শুধু শরীরকেই ক্ষয় করে না, ধ্বংস করে মনন, শিক্ষা ও সামাজিক বন্ধন। কিশোররা পড়াশোনায় মনোযোগ হারায়, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। অনেকেই চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ, হত্যার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কেবল একটি জীবন নয়, পুরো সমাজ। রাষ্ট্র হারায় আগামী দিনের যোগ্য নাগরিক।
করণীয় কী?
প্রথমত, পরিবারকে হতে হবে সতর্ক। সন্তানের প্রতি স্নেহ, ভালোবাসা আর নজরদারি দিতে হবে। শুধু বকাঝকা নয়, বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়াতে হবে।
দ্বিতীয়ত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত মাদকবিরোধী সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষকরা শুধু পড়াশোনাই নয়, শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থার প্রতিও খেয়াল রাখবেন।
তৃতীয়ত, সমাজকে হতে হবে প্রতিরোধের দুর্গ। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে মাদকের বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ তুলতে হবে। তরুণদের খেলাধুলা, নাটক, সংগীতের মতো ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করতে হবে।
চতুর্থত, রাষ্ট্রকে কঠোর হতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীরা সমাজের ক্যান্সার। তাদের প্রতি কোনো দয়া চলবে না। আইনের শাস্তি হতে হবে দৃষ্টান্তমূলক। তবে মাদকাসক্ত কিশোররা অপরাধী নয়, বরং ভুক্তভোগী। তাদের জন্য প্রয়োজন পুনর্বাসন, কাউন্সেলিং এবং নতুন জীবনের সুযোগ।
উপসংহার
মাদকের ভয়াল ছোবল থেকে কিশোরদের বাঁচানো মানে বাংলাদেশকে বাঁচানো। যদি আমরা আজই ঐক্যবদ্ধভাবে উদ্যোগ না নেই, তবে আগামীকাল হয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র—তিন পক্ষকেই একই সঙ্গে জাগ্রত হতে হবে। মাদকমুক্ত বাংলাদেশ কেবল একটি স্বপ্ন নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যতের টিকে থাকার শর্ত।
স্বপন বিশ্বাস
সাংবাদিক  কবি ও সমাজকর্মী
শালিখা মাগুরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *