Thursday, August 21
Shadow

জবিতে চলছে ৩ দিন ব্যাপী বই প্রদর্শনী ও মেলা উৎসব

রোকুনুজ্জামান, জবি প্রতিনিধি

“সৃজনের টানে, মিলি প্রাণে প্রাণের আয়োজনে”—এই প্রতিপাদ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কবি-লেখক-পাঠক ফোরামের আয়োজনে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী বই প্রদর্শনী ও মেলা ২০২৫। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের লেখা শতাধিক বই নিয়ে এই প্রদর্শনীতে সাজানো হয়েছে রঙিন আয়োজন।

রবিবার (১৭ আগস্ট) জবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে কবি-লেখক-পাঠক ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত ৩ দিন ব্যাপী “বই প্রদর্শনী ও মেলা-২০২৫” এর যাত্রা শুরু হয়।

প্রদর্শনীতে আয়াতুল্লাহ আল মাহমুদের লেখা যেখানে দুঃখরা নিরাপদে বাঁচে, ইমরান হোসাইন আদিবের সংকট, নিয়তির কাঁটাতার, ফুলমানুষ, কাঠ গোলাপ, সানোয়ার হোসেনের অরবিন্দু, যে তুমি দীর্ঘতম দুপুরে, বুকের মিনারে বুনো কবুতরসহ আরো অনেক বই লক্ষ্য করা যায় যেগুলোর প্রতিটিতেই রয়েছে লেখক কর্তৃক প্রদত্ত বিশেষ ছাড়। যার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে বই কেনার আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়।

সংগঠনের সভাপতি আয়াতুল্লাহ আল মাহামুদ বলেন, “আমাদের ফোরামের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল মননের বিকাশ ঘটানো। যারা বই পড়েন তাদের আরও অনুপ্রাণিত করা এবং যারা পড়েন না তাদের বইয়ের প্রতি আগ্রহী করে তোলা। এ উদ্দেশ্যে নিয়মিত কর্মশালা, সাপ্তাহিক আলোচনা সভা ও বিভিন্ন আয়োজন করে আসছি। এবার সেই ধারাবাহিকতায় তিন দিনব্যাপী বইমেলার আয়োজন করেছি।”

তিনি আরও জানান, “ফোরামের সদস্য ১৫ জনেরও বেশি লেখকের লেখা শতাধিক বই ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এই বইগুলো পাঠকদের হাতে পৌঁছে দিতে মেলায় বিশেষ ছাড় রাখা হয়েছে। অনেক প্রকাশনী যেখানে ২৫% পর্যন্ত ছাড় দিয়ে থাকে, সেখানে লেখকেরা নিজ উদ্যোগে ৩৫-৪০% পর্যন্ত ছাড় দিয়েছেন, যাতে শিক্ষার্থীরা স্বল্পমূল্যে বই সংগ্রহ করতে পারেন।”

সহ-সভাপতি মেজবা আহমেদ মারুফ বলেন, “এই মেলার বিশেষত্ব হলো এখানে প্রদর্শিত সব বই-ই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের লেখা। এর মধ্যেই অনেক বই দেশ-বিদেশে সাড়া ফেলেছে। আমরা এই আয়োজনের মাধ্যমে সবাইকে জানাতে চাই যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বিশ্বমানের কবি-লেখক উঠে আসতে পারে।”

শুধু আয়োজকই নয়, সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এই আয়োজনকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হুমাইরা জাহান উপমা বলেন, “বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে আমরা বই থেকে অনেকটা দূরে সরে যাচ্ছি। কিন্তু এই আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের আবার বইয়ের কেন্দ্রস্থলে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে, যা জ্ঞানের পরিধি ও আত্মসচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অধীনে এমন আয়োজন আরও বড় আকারে হলে আমাদের শিক্ষার পরিসর বিস্তৃত হবে। এখানে এসে আমি বিভিন্ন নতুন ক্যাটাগরির বইয়ের সাথে পরিচিত হতে পেরেছি। যেমন আদি ভাইয়ের ‘ফুল মানুষ’ বইটা প্রচলিত ধারার বাইরে এক ভিন্ন স্বাদের সৃষ্টি—যেখানে কাব্য আর ছোটগল্পের মিশ্রণ আছে। এ ধরনের ভিন্ন ধারা আমাদেরকে শুধু অনুসারী না হয়ে নিজস্ব কিছু সৃষ্টির অনুপ্রেরণা জোগায়।”

আয়োজকরা জানান, তিন দিনব্যাপী এ বইমেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলবে। মেলার মূল উদ্দেশ্য শুধু বই বিক্রি নয়, বরং তরুণ প্রজন্মকে সাহিত্যচর্চার প্রতি আগ্রহী করে তোলা এবং সৃজনশীল চর্চার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *