Tuesday, September 16
Shadow

বিদেশি ফল রাম্বুটানের বাম্পার ফলন, ৫০ লাখ টাকা বিক্রির আশা উদ্যোক্তার


ময়মনসিংহের ভালুকায় দুই বন্ধুর গড়া বাগানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রসাল ফল

সবুজে ঘেরা ময়মনসিংহের ভালুকার গোয়ারী গ্রাম। এই গ্রামে লাল মাটির জমিতে বিদেশি ফল রাম্বুটান–এর চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন দুই উদ্যোক্তা। থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা টসটসে রাম্বুটান শুধু দৃষ্টিনন্দনই নয়, খেতেও অত্যন্ত সুস্বাদু। ছয় একর জমি ইজারা নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে রাম্বুটানসহ দেশি-বিদেশি প্রায় ২০ প্রজাতির ফল চাষ করছেন শেখ মামুন ও আশরাফ উদ্দিন নামের দুই বন্ধু।

মূলত মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার ফল রাম্বুটান। এবার এই ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে ভালুকায়। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বাগানে রাম্বুটানের ফলন এত ভালো হয়েছে যে তাঁরা এ বছর প্রায় ৫০ লাখ টাকার ফল বিক্রির আশা করছেন।

মামুন পেশায় একজন ফার্নিচার ব্যবসায়ী আর আশরাফ উদ্দিন শিক্ষক। মূল পেশার পাশাপাশি তাঁরা গড়ে তুলেছেন ‘তাইফ এগ্রো’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তাঁদের বাগানে রয়েছে ২১২টি রাম্বুটানগাছ, পাশাপাশি অ্যাভোকাডো, পার্সিমন, লংগান, থাই লংগান, মিয়াজাকি আম, থাই জাম, সফেদা ইত্যাদি দেশি-বিদেশি প্রায় ১,০০০ গাছ।

কৃষি বিভাগ জানায়, রাম্বুটান মূলত লিচু পরিবারের ফল। খোসা হালকা চুলের মতো আঁশে ঢাকা, দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, খেতেও তেমনি মিষ্টি ও রসালো। ‘রাম্বুট’ শব্দটি মালয় ভাষার, যার অর্থ চুল। অনেকেই একে বলেন ‘হেয়ারি লিচু’ বা কেউ বলেন ‘ফলের রানি’। বাংলাদেশে এই ফলের চাষ তুলনামূলক নতুন হলেও আবহাওয়া ও মাটির গুণগত মানের কারণে ভালুকায় এটি বাণিজ্যিকভাবে সফল হচ্ছে।

বাগানে রয়েছে লাল ও হলুদ দুই রঙের রাম্বুটান। গাছে গাছে ঝুলছে থোকায় থোকায় রাম্বুটান। এই বাগান ঘুরে দেখা গেল, পাশাপাশি গরু পালনও চলছে। সেই গরুর গোবর দিয়ে তৈরি হচ্ছে ভার্মি কম্পোস্ট সার, যা ব্যবহার হচ্ছে ফল গাছে। ফলে রাসায়নিক সারের খরচ যেমন কমেছে, ফলনও বেড়েছে কয়েক গুণ।

বাগানটির তত্ত্বাবধায়ক সোহেল রানা বলেন, বাগানটি তৈরি করা হয় ২০২০ সালে। রাম্বুটান চাষই ছিল মূল লক্ষ্য। তাই থাইল্যান্ড থেকে আনা হয় ৪০০টি চারা। শুরুতে ভুল করে রাসায়নিক ব্যবহারে ১৮৮টি গাছ মারা যায়। বর্তমানে রয়েছে ২১২টি গাছ। ২০২৩ সাল থেকে ফলন শুরু হয়। এবার সব গাছেই প্রচুর ফল এসেছে।
তিনি আরও জানান, স্থানীয়ভাবে রাম্বুটানের চাহিদা খুব বেশি না হলেও অনলাইনে ও ঢাকায় চাহিদা অনেক। পাইকারি দরে কেজি প্রতি ১,০০০ থেকে ১,২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। বছরে দুইবার ফলন হয়—জুন-জুলাই ও নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে।

রাম্বুটানের সৌন্দর্য ও স্বাদ দেখতে-চাখতে প্রতিদিনই আসছেন দর্শনার্থীরা। কেউ গাছ থেকে ছিঁড়ে খাচ্ছেন, কেউ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
এক দর্শনার্থী আজহারুল ইসলাম বলেন, “আমি মালয়েশিয়ায় রাম্বুটান খেয়েছি। এখানকার রাম্বুটানও স্বাদে অসাধারণ। এমন উদ্যোগ দেশের তরুণদের অনুপ্রাণিত করবে।”

ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান বলেন, “এখানকার মাটি ও আবহাওয়া যেকোনো ফল চাষের জন্য উপযোগী। রাম্বুটান চাষে উদ্যোক্তারা যে সাফল্য দেখিয়েছেন, তা আমাদের কৃষির জন্য নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। তবে এই ফলের চারা উৎপাদন একটু জটিল। গবেষণার মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে চারা তৈরি করা গেলে সারা দেশে রাম্বুটান চাষ ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।”

বাংলাদেশে বৈচিত্র্যময় ফল চাষের ক্ষেত্রে ভালুকার এই রাম্বুটান বাগান নিঃসন্দেহে এক নতুন দৃষ্টান্ত। উদ্যোক্তা দুজনের সাহস ও পরিশ্রমের সফল রূপায়ণ আজ দেশের ফল চাষে যুক্ত করেছে নতুন সম্ভাবনা। ভবিষ্যতে দেশীয় কৃষির বৈচিত্র্যে রাম্বুটান হতে পারে একটি বড় সংযোজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *