Tuesday, September 30
Shadow

বাড়িওয়ালার অন্যায় অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতাল বন্ধ করে দিল চট্টগ্রাম’র সিভিল সার্জন

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ গত ২৯শে জুন চট্টগ্রাম নগরীর প্রবর্তক মোড়স্থ সেন্ট্রাল সিটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক কতৃপক্ষকে কোনো রকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এবং সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে সিভিল সার্জন কার্যালয় কর্তৃক হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা কতৃপক্ষ। 

আরো জানা যায়, শত মানুষের কর্মসংস্থান এই হাসপাতালটি বন্ধের পদক্ষেপ কেবল অন্যায় নয়, বরং সম্পূর্নরুপে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়ে, তাদের বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যাচার করে এ ধরনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই হাসপাতালটি সুনামের সাথে রোগীদের সেবা দিয়ে আসছে। গত ০৮(আট) বছর ধরে চিকিৎসা সংক্রান্ত কোন অভিযোগ এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে নেই। এমন একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যাচাই বাছাই না করে এবং ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করাটা জনসেবামূলক কার্যক্রমকে ব্যাহত করবে।

বাড়ীওয়ালার অন্যায় অভিযোগের ভিত্তিতেই একটি কুচক্রী মহলের যোগসাজশে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় বাড়িওয়ালাকে অবৈধভাবে হাসপাতালের দখল দেওয়ার জন্য এবং হাসপাতাল কতৃপক্ষকে উচ্ছেদ করতেই এইসব অবৈধ কার্যক্রম করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নোটিশ দেয় সিভিল সার্জন কার্যালয়। হাসপাতাল কতৃপক্ষ নোটিশ পেয়েই হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং কেয়ারটেকারকে দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু রবিবার (২৯ জুন) তারা আবার তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে অভিযানে চালিয়ে ডাক্তার, নার্স পাওয়া যায়নি বলে মিডিয়ার সামনে মিথ্যাচার করে যে বক্তব্য দিয়েছে তাতেই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় যে, তারা এটা উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়েই করেছে। এছাড়া সিভিল সার্জন কার্যালয় নিজেরাই স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিদ্যুৎ অফিসে বার বার ফোন করে হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে বলেছে।

এই প্রসঙ্গে জানা যায়, এই প্রতিষ্টানের ভবনটি হাসপাতাল সংক্রান্ত ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে হাটহাজারীর নাঙ্গল মোড়ার মো. সৈয়দ মিয়া হইতে ভাড়ায় গ্রহন করা হয়। যাহা একটি জরার্জীন ভবন ছিল মাত্র। বিভিন্নজন হতে বিনিয়োগ ও ঋন গ্রহন করে এই জরার্জীন ভবনে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে একটি আধুনিক হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার সহ ফার্মেসী, ডেন্টাল চেম্বার, মেডিক্যাল ও সার্জিক্যাল মার্ট প্রতিষ্টা করা হয়। প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পরেই বাড়ীওয়ালা, স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসা করার জন্য হাসপাতালে কতৃপক্ষের নিকট হতে হাসপাতালের অভ্যন্তরে অনৈতিকভাবে একটি অফিস রুম দাবী করে এবং হাসপাতালের এম্বুলেন্স স্বর্ণ চোরাচালানের জন্য ব্যবহার করার কুপ্রস্তাব দেয়। তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি উত্তেজিত হয়ে তাদেরকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। ঘরভাড়া চুক্তি বলবৎ থাকা অবস্থাতেই, হাসপাতালের কতৃপক্ষের নিকট অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে এবং তাতে রাজি না হওয়ায় তিনি হাসপাতালকে কুক্ষিগত করে তাহাদেরকে উক্ত দালান হইতে অবৈধভাবে উচ্ছেদ করার জন্য নানাভাবে পাঁয়তারা শুরু করে। হাসপাতাল কতৃপক্ষকে হয়রানী করবার উদ্দেশ্যে আইন বহিভূর্তভাবে সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে ডাঃ রেজাউল ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানান ধরনের মিথ্যা ও ভিত্তীহীন অভিযোগ প্রদান করে নানাভাবে দীর্ঘদিন ধরে হয়রানি করে আসছে।

বাড়ীওয়ালার বিষয় নিয়ে হাসপাতাল কতৃপক্ষ হাইকোর্টে একটি রীট করেছিলেন। সেখানে মহামান্য হাইকোর্ট বাড়ীওয়ালা ভাড়াটিয়া সংক্রান্ত ব্যক্তিগত বিরোধের মধ্যে প্রশাসনকে ব্যবহার না করতে সুস্পষ্ট ভাবে নিরুৎসাহিত করেছেন। বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া সংক্রান্ত ইস্যু আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তির নির্দেশনাও দেয়। মহামান্য হাইকোর্টের সেই রায় অনুযায়ী সিটি করপোরেশন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সুস্পষ্ট ভাবে তাদের রিপোর্টে সেটা উল্লেখ করেছেন। তারপরও বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া ইস্যু নিয়ে প্রশাসনের গুটিকয়েক মানুষের নগ্ন হস্তক্ষেপ সমগ্র বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং এটি আদালত অবমাননাও বটে।

গত ০৮(আট) বছর ধরে বাড়ীওয়ালা ও কতিপয় সুযোগসন্ধানী দুষ্কৃতকারী এবং একটি কুচক্রী ভুমিদূস্য মহলের ধারাবাহিক হয়রানির কারণে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা বারবার ব্যহত হয়েছে। যার ফলে হাসপাতালটি চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ও নানারকম ধার-দেনায় জর্জরিত আছে। যা বর্তমান পরিস্থিতিতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। 

হাসপাতাল কতৃপক্ষ অবিলম্বে এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং হাসপাতালটি পুনরায় খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। একই সাথে, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটন এবং দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *