Tuesday, September 16
Shadow

তোমার অপেক্ষায়

মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন ইবনে মোস্তাফিজ

রাত গভীর। জানালার কাঁচে জমে ওঠা শিশিরের ফোঁটাগুলো যেন তারই মনের ভেতর জমে থাকা স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে ঘরের ভিতরেও। এক কোণে একটা ছোট্ট টেবিল, টেবিলের ওপর খোলা একটা ডায়েরি। ছেলেটি ডায়েরির পৃষ্ঠায় কলম চালাচ্ছে। ভাবনার জোয়ারে ভাসছে মনটা। সে এক

অবিবাহিত পুরুষ, অথচ তার লেখাগুলো যেন রোমান্সের সরল নদী।

আমার প্রিয়তমা,

আজও আমি তোমায় অনুভব করি। জানি না তুমি কোথায়, তবে নিশ্চিত আমি তুমি

আমারই জন্য গড়া। তোমার হাতে তুলে দেওয়া পানির গ্লাসেও আমি খুঁজে পাবো

শ্রদ্ধা, আর আমি তোমার হাত ছুঁয়ে বোঝাতে চাই এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা শুধু

তোমার জন্যই সঞ্চিত রেখেছি।

তুমি হয়তো কখনো আমার মুখের দিকে তাকিয়ে স্রেফ চোখ নামিয়ে নেবে সংস্কারের

লালিত্যে। কিন্তু আমি তো জানি, তোমার সে চোখে থাকবে আমার প্রতি অগাধ

শ্রদ্ধা। সেই শ্রদ্ধা আমার ভালোবাসাকে আরও পরিপূর্ণ করে তুলবে।

একদিন নিশ্চয়ই আমাদের ছোট্ট একটি সংসার হবে। ভোরে ঘুম ভাঙবে ফজরের

আযানে। তুমি পাশে উঠে বসে বলবে, ওঠো, নামাযের সময় হয়েছে। আমি তোমার দিকে

তাকিয়ে ধীর কণ্ঠে বলব, তুমি থেকো আমার পাশে, ছায়ার মতো, প্রাণের মতো। চলো,

দুজনে মিলে ভালোবাসার সেজদায় লুটিয়ে পড়ি, রবের দরবারে নিবেদন করি আমাদের

নিখাদ অনুভব। নামাজের পর ক্লান্ত দেহে আমি মাথা রাখব তোমার উরুতে তোমার

কণ্ঠে ছলকে পড়া কুরআনের মধুর তেলাওয়াত আমার হৃদয়কে করবে আলোয়

পরিপূর্ণ, প্রতি আয়াতে আমি খুঁজে পাবো প্রশান্তির স্বর্গ। তোমার কণ্ঠের

প্রতিটি শব্দ হবে আমার হৃদয়ের ধ্বনি, তোমার দৃষ্টির কোমলতা হবে আমার

আত্মার আরাম। এই হৃদয় যদি ভেঙেও যায় কোনোদিন, তবে তা ভাঙুক তোমার

কুরআনের শব্দে গলে গলে।

চলো, জীবনটাকে সেজদার মতো নিঃস্বার্থ করে তুলি, তোমার পাশে থেকে রবের

ইবাদতেই হোক আমাদের প্রেমের পূর্ণতা।

আমাদের আঙ্গিনা হবে শান্তির। ঝর্ণার মতো কলকল হাসিতে ভরে উঠবে প্রতিটা

দুপুর। সন্ধ্যাবেলায় চায়ের কাপে ঠোঁট ছুঁইয়ে যখন বলব, আজ তোমাকে খুব ভালো

লাগছে, তুমি একটু লাজুক হেসে বলবে, সবসময় তো বলো এমন। আমি তখন বলব,

তোমাকে দেখে ভালো লাগার তো শেষ নেই!

রান্নাঘরেও ভালোবাসার গন্ধ থাকবে। তুমি যখন মুচকি হেসে খাবার পাতে তুলে দেবে

আমার প্রিয় লুডুস, আমি বলব, তুমি কি জানো, এ রান্না নয়, আমার হৃদয়ের রসায়ন।

একদিন হয়তো বসব আমরা বারান্দায়। চুপচাপ। তবুও ভেতর ভেতর কথার ফুলঝুড়ি।

বাতাসে উড়বে তোমার ওড়না, আমি ধরব সেটা, তুমি বলবে, ছাড়ো তো! আমি বলব,

তোমার এই ওড়নাটা আমার স্বপ্নের অনেক গভীরে বাঁধা। ছাড়তে পারব না..

রাত্রে ঘুমোতে যাওয়ার আগে তুমি যখন বলবে, আজকের দিনটা খুব সুন্দর ছিল,

আমি বলব, তোমার থাকার কারণেই।

আমি এখনও জানি না তুমি কে। হয়তো তুমি আমার কোনো লেখার পাঠক। হয়তো

অচেনা কোনো নাম যাকে আমি চিনি না, তবুও হৃদয়ের গভীর কোণে তুমি বিরাজমান।

আমার জীবন এখনো পূর্ণ হয়নি, কিন্তু ভালোবাসার ঘাটতি নেই। হয়তো একদিন তুমি

এসেই যাবে। সেই দিনের প্রতীক্ষায় আমার কলম থেমে থাকে না। কল্পনায় আমি

তোমায় সাজাই, ভালোবাসি, আর ভালোবাসায় শ্রদ্ধা আর সম্মানের রঙ মিশিয়ে নিই।

যখন আসবে, চুপচাপ আমার কাঁধে মাথা রাখবে, আমি বলব, তুমি দেরি করে এসেছো,

কিন্তু আমার হৃদয়ে জায়গা করে নিতে এক মুহূর্তও দেরি করোনি।

তোমার আসার পথ চেয়ে আছি..

ছেলেটি ডায়েরি বন্ধ করল। চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে চাঁদের আলোয় জানালার

বাইরে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। হঠাৎ বাতাসে এক পরশ। যেন কেউ সত্যিই পাশে

এসে দাঁড়িয়েছে। তার মন বলে উঠল হয়তো সেই প্রিয়তমা সত্যিই আসবে। হয়তো

আজ নয়, কাল নয়, কিন্তু কোনো এক পূর্ণিমার রাতেই সে আমায় জড়িয়ে ধরবে

ভালোবাসায়।

আর সেই দিন থেকেই শুরু হবে এক নিঃস্বার্থ, শ্রদ্ধাভরা প্রেমের পূর্ণাঙ্গ গল্প

যার নাম হবে তোমার অপেক্ষায়।

শেষ নয়। অপেক্ষার গল্প শুরু হলো মাত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *