Site icon আজকের কাগজ

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগব্যবস্থা: সমস্যা ও করণীয়

স্বপন বিশ্বাস: বাংলাদেশের মাধ্যমিক শিক্ষার প্রায় ৯৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত। এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখছে। গত কয়েক বছরে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (NTRCA)-এর মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয়, স্বচ্ছ নিয়োগব্যবস্থা চালু হয়েছে। এতে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে, যা একটি ইতিবাচক পরিবর্তন।

কিন্তু সমস্যা থেকে যাচ্ছে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং  কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে। এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে এখনো নিয়োগের ক্ষমতা রয়েছে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ বা ম্যানেজিং কমিটির হাতে। আর এখানেই গড়ে উঠেছে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের এক অন্ধকার চক্র। 

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক প্রভাব, আর্থিক লেনদেন কিংবা ব্যক্তিগত সম্পর্কের জোরে একজন প্রার্থী প্রধান শিক্ষক বা প্রশাসনিক কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পেয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দক্ষতার অভাব দেখা দেয়, শিক্ষকদের মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি হয় এবং পাঠদানের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

শুধু শিক্ষকতা নয়, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নেতৃত্ব ও প্রশাসনিক দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অদক্ষ বা প্রভাবশালী কিন্তু অযোগ্য কারও হাতে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব থাকলে, শিক্ষার মান ব্যাহত হয়। এতে করে শিক্ষার্থীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি সমাজও গুণগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়।

এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে এখনই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে—প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগেও একটি জাতীয় নিয়োগব্যবস্থা চালু করা। ঠিক যেভাবে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ এনটিআরসির মাধ্যমে হয়, তেমনি এই প্রশাসনিক পদেও একটি মেধা ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক কেন্দ্রীয় নিয়োগপদ্ধতির দরকার। এ নিয়োগ হতে পারে জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ে গঠিত বিশেষ বোর্ডের মাধ্যমে, যেখানে সরকারি প্রতিনিধি, শিক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং স্থানীয় অভিভাবকদের অংশগ্রহণ থাকবে।

একই সঙ্গে ম্যানেজিং কমিটির গঠনতন্ত্রে সংস্কার আনা দরকার। এ কমিটিকে রাজনীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক করতে হবে। পরিচালনা পর্ষদে যেন কেবল নিরপেক্ষ, শিক্ষানুরাগী এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা স্থান পান, তা নিশ্চিত করা জরুরি।

এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (DSHE) সরাসরি তদারকির ব্যবস্থাও জরুরি। নিয়োগসংক্রান্ত সব কার্যক্রম যেন অনলাইনে নথিভুক্ত হয়, তা নিশ্চিত করলে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে এবং অনিয়ম রোধ করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে হলে শুধু পাঠ্যবই নয়, পাঠদানের পরিবেশ ও নেতৃত্বেও পরিবর্তন আনতে হবে। দক্ষ ও সৎ নেতৃত্ব ছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই গুণগত শিক্ষা দিতে পারে না। তাই এখনই সময়—বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগব্যবস্থায় সত্যিকারের সংস্কার আনার। এই সংস্কারই আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে।

লেখক:  সাংবাদিক ও কবি, শালিকা, মাগুরা

Exit mobile version