Sunday, July 20
Shadow

পরিবেশকে সামনে রেখে সবুজ উন্নয়ন ছিংহাইতে

গ্রীষ্ম এলে চীনের ছিংহাই হ্রদের দৃশ্যপট বদলে যায়। এবারের গরম থেকে স্বস্তি পেতে হ্রদের নীল জলে ভেসে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে হাজারো বাদামি দাগওয়ালা গাঙচিল। নিচে ঝাঁকে ঝাঁকে চলেছে লেকের মাছ ‘নেকেড কার্প’।

ছিংহাই হ্রদের সংরক্ষণ বিভাগের ওয়াং শু-নিং জানালেন, হ্রদের যত মাছ আছে তার ৯০ শতাংশের বেশি নেকেড কার্প। গাঙচিলের মতো পাখিদের প্রধান খাবারই এটি। এটি হ্রদের বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৬০ ও ৭০-এর দশকে অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণে এই প্রজাতির সংখ্যা কমে যায়। পরে ২০০১ সালে পুরোপুরি মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। এতে করে ২০০২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে নেকেড কার্পের সংখ্যা বেড়ে যায় ৪৬ গুণ!

এ ছাড়াও, বিলুপ্তপ্রায় প্রেজেওয়ালস্কি গেজেলের সংখ্যাও বেড়ে এখন প্রায় ৩,৪০০’তে দাঁড়িয়েছে, যা একসময় ছিল মাত্র ৩০০টি। এটি চীনের সরকার ও স্থানীয়দের একত্রে কাজের ফল।

ছিংহাই হ্রদের পানি-ঘাস-মাছ-পাখি মিলিয়ে গড়ে উঠেছে একটি পূর্ণাঙ্গ বাস্তুতন্ত্র। এর সুরক্ষায় ৩০০–এর বেশি ইকো-মনিটরিং সাইট বসানো হয়েছে। তৈরি হয়েছে হাইড্রোলজিক ও পরিবেশগত সতর্কতার ব্যবস্থা।

স্থানীয় বাসিন্দা দর্জে চোমো এখন হ্রদের পরিবেশ রক্ষায় রেঞ্জার হিসেবে কাজ করেন। তিনি নিয়মিত ক্যামেরায় ছবি তোলেন, পাখি চেনার জন্য ৯৮ প্রজাতির ছবি ও তথ্য সম্বলিত বই ব্যবহার করেন এবং উইচ্যাট অ্যাপে প্যাট্রোল রুট রেকর্ড করেন। আহত পাখি পেলেই তাকে খবর দেয় স্থানীয়রা।

এখানকার অনেকে এখন পরিবেশবিষয়ক গাইড, ফটোগ্রাফার, শিক্ষকের ভূমিকায় এগিয়ে আসছেন—আয় বাড়ছে, সঙ্গে পরিবেশ রক্ষাও।

জাপানি সাংবাদিক ফুরুতা নাতসুয়া বলেন, ‘এখানে সত্যিই মানুষ ও প্রকৃতির সহাবস্থানের এক দারুণ উদাহরণ দেখলাম। এটা খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক।’

২০২৪ সালের এপ্রিলে ছিংহাইয়ের হুয়াংনান এলাকায় কাঞ্জবুলা অঞ্চলকে ইউনেস্কো গ্লোবাল জিওপার্ক ঘোষণা করে। ৩,১৪৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত এই পার্কে আছে লাল-রঙা পাহাড়, গুহা, লেকসহ অসাধারণ ভূ-গঠন।

এই পার্ক পর্যটন বাড়ানোর পাশাপাশি স্থানীয়দের আয়ের উৎসও খুলে দিয়েছে। পার্কের পাশে ডেকি গ্রাম এর জীবন্ত উদাহরণ।

গ্রামের বাসিন্দা জোরগি বলেন, ‘সরকারি প্রশিক্ষণের ফলে আমরা এখন হোমস্টে ও কৃষি-ভিত্তিক পর্যটন চালাই। গত বছর আয় হয়েছিল ৭০ হাজার ইউয়ানের বেশি। এ বছর আরও ভালো হবে মনে হচ্ছে।’

এ গ্রামে বছরে ২ লাখের বেশি পর্যটক আসে। এতে সবার মোট আয় ছাড়িয়ে যায় ১০ লাখ ইউয়ান।

স্পেনের সাংবাদিক আলভারো আলফারো বলেন, ‘আমাদের দেশে বড় বড় সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে পরিবেশের ওপর প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়। ছিংহাই কীভাবে এই ভারসাম্য বজায় রাখছে, তা জানতে আমি আগ্রহী ছিলাম।’

এই উত্তর খুঁজে পান তিনি কোংহ্য কাউন্টিতে চীনের অন্যতম বৃহৎ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। সেখানে সৌর প্যানেলের নিচে ঘাস জন্মানো হয়, আর সেই ঘাসে চরানো হয় ভেড়া—একসঙ্গে চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পশুপালন।

এই এলাকায় আগে ছিল ধুলোময় মরুভূমি, এখন সেখানে ৮০ শতাংশ জমিতে আবার সবুজ ফিরে এসেছে। এতে পশুপালকের আয় বেড়েছে, প্রতি হেক্টর থেকে বছরে আয় হচ্ছে প্রায় ২১ হাজার ডলার।

স্থানীয় বাসিন্দা চাও কুয়োফু বলেন, ‘আগে আমার হাতে কিছুই ছিল না। এখন ৮০০টা ভেড়া আছে, আগের চেয়ে আয় বেড়েছে দ্বিগুণ।’

সূত্র: সিএমজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *