Saturday, July 19
Shadow

যে খাবারগুলো কখনই ফ্রিজে রাখা উচিত নয় এবং কেন নয়

বর্তমানে ফ্রিজ ছাড়া কোন পরিবার চলতে পারে না। এটা পরিবারের একটি অংশ হয়ে আছে। আমাদের রান্নাঘরের নীরব নায়ক—খাবারকে সতেজ রাখে, সময় বাঁচায়, আর বাসি হয়ে যাওয়া খাবারের ঝুঁকি কমাতে এর জুড়ি নাই। তবে জানেন কি, সব খাবারই কিন্তু ঠাণ্ডা জায়গা পছন্দ করে না! দুধ হয়তো ফ্রিজে রাখা ভালো, কিন্তু এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো ঠাণ্ডাতে রাখলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে। কখনো কখনো ভুলভাবে সংরক্ষণ করলে স্বাস্থ্যের ঝুঁকিও তৈরি হয়! নিচে এমন কিছু খাবারের তালিকা দেয়া হল যেগুলো ফ্রিজে রাখা একদম উচিত নয়।

১. আলু

আলু ফ্রিজে রাখলে তার শর্করা দ্রুত চিনিতে পরিণত হয়ে যায়, যা স্বাদ ও গঠন—দুটোরই ক্ষতি করে। তাই আলু রাখুন রান্নাঘরের কোনো ঠাণ্ডা-শুষ্ক স্থানে রাখতে হবে কিন্তু ফ্রিজে নয়।ফ্রিজে বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় রাখলে আলু শক্ত হয়ে জেতে পারে। তাই আলুকে দীর্ঘ দিন ভাল রাখতে চাইলে ফ্রীজে রাখা যাবে না।

২. কলা

কলা ফ্রিজে রাখলে দ্রুত কালচে হয়ে যায়। তাই কলা কেনার সময় পুরো পেকে যাওয়ার আগেই কিনুন এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে পাকতে দিন।

৩. গোটা তরমুজ ও ফল

তরমুজ ফ্রিজে রাখলে তা দ্রুত পচে যায়। তাই গোটা তরমুজ ফ্রিজে না রেখে ঠাণ্ডা ও শুষ্ক জায়গায় রাখুন। কাটার পর চাইলে ঠাণ্ডা করতে পারেন, তবে পুরো ফল ফ্রিজে রাখবেন না।

৪. তাজা তুলসী (বা বেসিল)

তুলসী ফ্রিজে রাখলে এর পাতায় কালো দাগ পড়ে এবং স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। বরং একটু পানির ছিটা দিয়ে তা রান্নাঘরে রাখুন। এতে অনেকদিন টাটকা থাকবে এবং রান্নায় দারুণ স্বাদ আনবে।

৫. পেঁয়াজ

পেঁয়াজ ফ্রিজে রাখা উচিত নয়। এতে তা তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। পেঁয়াজের সংরক্ষণের জন্য শুষ্ক ও হাওয়াবহুল জায়গাই সবচেয়ে উপযুক্ত। এবং হ্যাঁ, পেঁয়াজ আর আলু একসঙ্গে রাখলে দুটোই তাড়াতাড়ি খারাপ হয়ে যাবে তাই পেয়াজ ও আলু একসাথে রাখা যাবে না।  

৬. কফি

ফ্রিজের ভেজা বাতাসে কফির স্বাদ ও সুবাস নষ্ট হয়ে যায়। তাই কফিকে রাখুন এয়ারটাইট কন্টেইনারে, সূর্যের আলো থেকে দূরে।

৭. রসুন

রসুন ফ্রিজে রাখলে ভেতরে অদৃশ্যভাবে পচে যেতে পারে এবং খুব সহজেই ছাঁচ ধরে যায়। তাই একে রাখুন শুষ্ক ও গরম স্থানে—যেখানে তা প্রাকৃতিকভাবেই সংরক্ষিত থাকবে।

৮. হট সস

হট সসে সাধারণত ভিনেগার থাকে, যা সংরক্ষণে সাহায্য করে। ফ্রিজে রাখলে এর তীব্রতা কমে যেতে পারে। তাই টেবিলে রাখুন আর স্পাইসি স্বাদটা উপভোগ করুন।

৯. পাউরুটি

পাউরুটি ফ্রিজে রাখলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় ও শক্ত হয়ে যায়। ফলে তা আগেই বাসি মনে হয়। তাই পাউরুটি বাইরে রাখাই ভালো।

১০. তেল

অলিভ অয়েল বা অন্যান্য তেল ফ্রিজে রাখলে তা জমে যায় ও গুণগত মান হারায়। যদি ভুল করে ফ্রিজে রেখে ফেলেন, তবে মাইক্রোওয়েভে একটু গরম করলেই আবার ব্যবহারযোগ্য হবে। তবে সবচেয়ে ভালো হলো, একে বাইরে রাখা।

১১. মধু

মধু একমাত্র প্রাকৃতিক খাবার, যা শতাব্দী ধরে ভালো থাকে। ফ্রিজে রাখলে তা জমে যায় ও ব্যবহার কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ঘরের তাপমাত্রায় রাখুন এবং এর মোলায়েম মিষ্টি স্বাদ উপভোগ করুন।

১২. ফল: অ্যাপ্রিকট, কিউই, পীচ, আম

এই ধরনের ফল ফ্রিজে রাখলে এর ভেতরে বরফকণা তৈরি হয়, যা দ্রুত পচনের কারণ হয়। তাই এই সকল ফল খাবার টেবিলে একটি ফলের ঝুড়িতে রাখাটাই শ্রেয়।

১৩. পিনাট বাটার

মসৃণ বা খসখসে—যেমনই পছন্দ করুন না কেন, পিনাট বাটার ফ্রিজে রাখলে তা শক্ত হয়ে যায় এবং মাখানো কষ্টকর হয়। কাজেই একে রাখুন কিচেন শেলফেই।

১৪. ময়দা

ময়দা ফ্রিজে রাখলে ক্ষতি হয় না, তবে তেমন লাভও হয় না। বরং জায়গা দখল করে রাখে। তাই একে রাখুন বাইরে এবং ফ্রিজটাকে ব্যবহার করুন দুধ বা টাটকা পণ্যের জন্য।

১৫. আচার/পিকলস

পিকলের মধ্যে থাকা ভিনেগারই একে দীর্ঘদিন সংরক্ষণে সহায়তা করে। ফ্রিজে রাখলে স্বাদ কমে যেতে পারে। তাই ভালোভাবে ঢেকে রাখুন এবং কেবল প্রয়োজনের সময়ই ঠাণ্ডা করুন।

১৬. সয়াসস

সয়াসস নিজেই প্রাকৃতিকভাবে জীবাণুরোধী। ফ্রিজে রাখলে এর স্বাদে হেরফের হয়। তাই খাবার টেবিলেই এটি ভাল থাকবে।

১৭. ডিম

xr:d:DAFyIa5iv1Y:197,j:1772573428749606020,t:23102404

ডিম ফ্রিজে রাখবেন কি রাখবেন না—এ নিয়ে বহুদিনের বিতর্ক। ফ্রিজে রাখলে দীর্ঘদিন টিকে, আর বাইরে রাখলে স্বাদ ও গঠন ভালো থাকে। আপনি যেভাবে খেতে পছন্দ করেন, সিদ্ধান্তটা সেভাবেই নিন!

১৮. চকলেট

চকলেট ফ্রিজে রাখলে এর গঠন নষ্ট হয়ে যায়—চকচকে ভাব হারিয়ে ফ্যাকাসে সাদা দাগ পড়ে। তাই একে রাখুন ঠাণ্ডা ও শুকনো জায়গায় রাখলেই এর প্রকৃত মোলায়েম স্বাদ পাবেন।

১৯. জ্যাম ও জেলি

প্রিজারভেটিভ যুক্ত জ্যাম-জেলি ফ্রিজে রাখার প্রয়োজন নেই। বরং ফ্রিজের ভেজা পরিবেশে তা খেতে ভালো না-ও লাগতে পারে। বাইরে রাখুন আর গরম টোস্টের সাথে খেতে থাকুন মজাদারভাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *