Site icon আজকের কাগজ

মান্দায় অসহায় আলেকজানের পাশে ইউএনও

অসহায় আলেকজানের পাশে ইউএনও

মাহবুবুজ্জামান সেতু, নওগাঁ : আলেকজান বিবি। ৮৩ বছর বয়সী এই বৃদ্ধাকে আদর করে সবাই ডাকেন আলো বলে। একটা সময় আলেকজান বিবির ঘর ছিল, ছিলো স্বামী সংসার। তবে স্বামী হারিয়ে বিধবার খাতায় নাম লিখিয়েছেন বহু বছর আগেই। সেই থেকে নিস্বঙ্গভাবে বেঁচে আছেন আলেকজান বিবি। বর্তমানে এই পৃথিবীতে তার কেউ নেই বলে জানিয়েছেন।
ভূমিহীন আলেকজান বিবি বছর কয়েক আগে সরকারের দয়ায় পাওয়া মান্দা উপজেলার দক্ষিণ মৈনম গ্রামে লাভের পাড়ায় অবস্থিত ছোট্ট কুঁড়েঘরে থাকেন তিনি। এরপর থেকে সেখানেই বাস করেন তিনি। তবে মাথাগোজার ঠাইয়ের দুশ্চিন্তা দূর হলেও ঘরে ছিলোনা আলোর ব্যবস্থা। ফলে বয়সের ভাড়ে চোখের জ্যোতি হারানো আলেকজানকে রাতের বেলা চলাফেরায় কষ্ট পেতে হত। ছিলো না বৈদ্যুতিক ফ্যান। এভাবেই আলো বাতাস ছাড়া জীবনের বহু বছর কাটিয়েছে আলেকজান বিবি।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আলেকজান বিবির ঘরে আলোর ব্যবস্থা করেছে উপজেলা প্রশাসন। দেওয়া হয়েছে সৌর বিদ্যুৎ। সেই সাথে দেওয়া হয়েছে খাবার সামগ্রী।  
আলেকজান বিবি জানান, বয়স হয়েছে এজন্য চোখে দেখিনা ভালোভাবে। মাস কয়েক আগে গ্রামের এক ছেলে ছোট্ট একটা টর্চ লাইট কিনে দিয়েছিল তাকে। তা দিয়েই রাতের বেলা ভাত খাওয়া থেকে শুরু করে অন্ধকারের ভেতর সব কাজ করেন তিনি। বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকায় অন্যনের বাড়িতে গিয়ে চার্জে দিতে হয় লাইটটি। এভাবেই কষ্টের মধ্যে দিয়ে জীবন চলছিল তার। হঠাৎ একদিন গ্রামের এক পরিচিত গ্রাম পুলিশ তাকে বলেন উপজেলায় গিয়ে ইউএনওর সাথে দেখা করতে এবং তার সমস্যা জানাতে। এরপর তিনি উপজেলায় গিয়ে ইউএনওকে তার কষ্টের বিষয়টি জানান।
উপার্জনক্ষম আলেকজান গ্রামের দশবাড়ি ঘুরে খাবার জোটাতেন। পারেন না কাজ করতে, তাই প্রতিবেশীর দেওয়া সহযোগিতায় জীবন চলত তার। তবে সব থেকে বড় সমস্যা ছিলো বৈদ্যুতিক আলোর। আলেকজানের ঘরে আলো দেখে খুশি প্রতিবেশীরা।

মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ আলম মিয়া জানান, কিছু দিন আগে অফিসে গণশুনানির কাজ চলছিল। এমন সময় বয়োবৃদ্ধ আলেকজান বিবি আসেন অফিসে  এবং তার ঘরে বিদ্যুৎ নেই, ফ্যান নেই অন্ধকারে গরমের মধ্যে থাকতে তার কষ্ট হয় এসব বিষয়ে জানান। আলেকজান বিবির মুখে তার কষ্টের কথা শুনে আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি এবং সেই সময় আমি প্রতিজ্ঞা করেছি তার ঘরে আমি আলো জ্বালাবো। সেই কথা মত আলেকজান বিবির ঘরে সোলার বিদ্যুৎ বসানো হয়েছে। দেওয়া হয়েছে লাইট এবং ফ্যান। যাতে করে তার কষ্ট কিছুটা কমে। এর পাশাপাশি তাকে কিছু খাদ্য সামগ্রী উপহার দেয়া হয়েছে।
ইউএনও আরও জানান, আমাদের সমাজে এমন অনেক আলেকজান বিবি রয়েছেন। যারা বিধবা এবং বয়স্ক চলতে ফিরতে পারেন না। প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এই মানুষগুলোর পাশে এসে দাঁড়ানো উচিৎ। তাহলেই আমাদের দেশ সমাজ সুন্দর হবে।

Exit mobile version