Site icon আজকের কাগজ

চীন–পাকিস্তান–বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি, বলছেন ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক

প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক

ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নিজেদের স্বার্থে একে অপরের প্রতি ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, যা ভারতের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।

গতকাল মঙ্গলবার ভারতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন।

জেনারেল চৌহান বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কিছু দেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে, আর এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বহিরাগত শক্তিগুলো প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নিচ্ছে। বিশেষ করে ‘ঋণ-কূটনীতি’র মাধ্যমে তারা এ অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করছে, যা ভারতের জন্য ভবিষ্যতে বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এসব দেশের সরকার বারবার পরিবর্তিত হচ্ছে এবং তাদের রাজনৈতিক আদর্শেও বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। এর ফলে ভারতের জন্য এক নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে।

চৌহান আরও জানান, সম্প্রতি চীনের কর্মকর্তারা সে দেশে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক সম্মেলনে মিলিত হয়েছেন। এই তিন দেশ—চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ—তাদের নিজস্ব স্বার্থে একে অন্যের সঙ্গে কূটনৈতিক ও কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে। আর এই ঘনিষ্ঠতাই ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, চীন ও পাকিস্তানের সম্পর্ক বহু পুরোনো এবং গভীর। অন্যদিকে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি এবং ভারতে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এই প্রেক্ষাপটে চীন–পাকিস্তান–বাংলাদেশের কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা নিয়ে ভারত উৎকণ্ঠায় রয়েছে বলেই মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর মতে, এই প্রক্রিয়া ভারতের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

সেমিনারে এক পর্যায়ে জেনারেল চৌহানকে প্রশ্ন করা হয়, পাকিস্তান–ভারত সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় চীনের ভূমিকা কী ছিল? জবাবে তিনি বলেন, ওই সংঘাতের সময় চীন যে পাকিস্তানকে কতটা এবং কীভাবে সাহায্য করেছে, তা নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। কারণ উত্তর সীমান্তে তেমন কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি।

তবে তিনি বলেন, পাকিস্তান তাদের বেশির ভাগ প্রতিরক্ষা সরঞ্জামই চীন থেকে সংগ্রহ করে। ফলে যুদ্ধ বা সংঘাতের সময় চীনের উপস্থিতি এবং সহযোগিতা ছিল, এমনটা ধরে নেওয়াই স্বাভাবিক। ঠিক কতটা সহায়তা দেওয়া হয়েছিল, বা তার প্রকৃতি কেমন ছিল—তা নির্ধারণ করা কঠিন।

এ বিষয়ে ভারতের উপসেনাপ্রধান লে. জেনারেল রাহুল আর. সিং আরও স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। গত শুক্রবার তিনি জানান, সাম্প্রতিক পাকিস্তান–ভারত সংঘাতের সময় চীন শুধু পাকিস্তানকে সাহায্যই করেনি, বরং ওই সংঘাতকে তাদের অস্ত্রের পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করেছে।

জেনারেল রাহুল বলেন, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান যে অস্ত্র ব্যবহার করেছে, তার ৮১ শতাংশই ছিল চীনের তৈরি। ফলে প্রকৃত যুদ্ধে চীনা অস্ত্রের কার্যকারিতা যাচাই করার সুযোগ পেয়েছে চীন, এবং এই সংঘাতকে তারা নিজেদের সামরিক গবেষণার জন্য কাজে লাগিয়েছে।

Exit mobile version