
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের লক্ষ্যেই আজকাল অনেকে নানা উপায় অনুসরণ করছেন—কখনও খাদ্যতালিকায় কঠোর নিয়ম মেনে চলছেন, কখনও বা বিকল্প উপাদানের খোঁজ করছেন। এ ধরনের একটি জনপ্রিয় প্রবণতা হলো হিমালয়ান পিংক সল্ট বা গোলাপি লবণের ব্যবহার। নানা স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে এই লবণ আজকাল অনেক স্বাস্থ্যসচেতন পরিবারের রান্নাঘরে নিয়মিত জায়গা করে নিয়েছে।
তবে এই লবণের উজ্জ্বল গোলাপি রঙ আর কথিত গুণাগুণের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যঝুঁকি—আয়োডিন ঘাটতি। আয়োডিন হলো একটি অত্যাবশ্যকীয় খনিজ উপাদান, যা থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক কার্যক্রম ও সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
সম্প্রতি এক ইনস্টাগ্রাম ভিডিওতে গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ও হেপাটোলজির চিকিৎসক ড. আলি কাজেমি ভারতে আয়োডিন ঘাটতির বাড়বাড়ন্ত নিয়ে সতর্কতা দিয়েছেন। তার দাবি, সাধারণ আয়োডিনযুক্ত টেবিল সল্ট বাদ দিয়ে হিমালয়ান পিংক সল্ট কিংবা সি সল্ট ব্যবহারের প্রবণতা এই ঘাটতির একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লেখেন—
“একজন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলছি: জানেন কি, একসময় প্রায় নির্মূল হয়ে যাওয়া আয়োডিন ঘাটতি আবার ফিরে আসছে, আর এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো iodised salt বাদ দিয়ে হিমালয়ান ও সি সল্টের জনপ্রিয়তা?”
আয়োডিনসমৃদ্ধ লবণের উপকারিতা তুলে ধরে তিনি বলেন,
“আয়োডিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি থাইরয়েডজনিত অনেক রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে বিশাল ভূমিকা রাখে। তাই শরীরে প্রয়োজনীয় আয়োডিন নিশ্চিত করতে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করা জরুরি, অথবা মাছ, দুগ্ধজাত পণ্য ও সামুদ্রিক শৈবালের মতো আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, চীন, জার্মানি, ভারত, ইতালি, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা সহ বিভিন্ন দেশের ২০,৬৬৬ জন মানুষকে নিয়ে করা একটি বৃহৎ গবেষণায় দেখা গেছে, আয়োডিন সাপ্লিমেন্ট বা পরিপূরক গ্রহণ করলে আয়োডিন-সংক্রান্ত রোগে মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসে।
আয়োডিনসমৃদ্ধ লবণের উপকারিতা
১. আয়োডিনযুক্ত লবণ গলগণ্ড (গয়টার) সমস্যায় থাইরয়েড গ্রন্থির আকার কমাতে সহায়তা করে।
২. এটি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশেও সহায়ক ভূমিকা রাখে।
৩. আয়োডিন ঘাটতি থেকে সৃষ্ট হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণগুলো ঝুঁকিপূর্ণভাবে দেখা না দেওয়ার সম্ভাবনা কমায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্যকর লবণ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে শুধু জনপ্রিয়তার দিকে না তাকিয়ে আয়োডিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি। দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য রক্ষা করতে আয়োডিনযুক্ত লবণের ব্যবহার সচেতনভাবে চালিয়ে যাওয়া উচিত।