Site icon আজকের কাগজ

পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সেনাদের ওপর ইসরাইলিদের  হামলা: ছয় ইসরায়েলি আটক

ইসরাইলিদের হামলা

পশ্চিম তীরে মোতায়েন ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলার ঘটনায় ছয়জন ইসরায়েলিকে আটক করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। শনিবার এক বিবৃতিতে তারা এ তথ্য জানিয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম তীরের মধ্যাঞ্চলীয় কাফর মালিক গ্রামে। কয়েকদিন আগে, বুধবার, ওই গ্রামে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় তিন ফিলিস্তিনি নিহত হন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, শুক্রবার রাতে ইসরায়েলি নাগরিকদের একটি জমায়েত ছত্রভঙ্গ করার সময় সেনাদের ওপর চড়াও হয় তারা। বিবৃতিতে বলা হয়, “ডজনখানেক ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক সেনাদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে এবং শারীরিক ও মৌখিকভাবে আক্রমণ চালায়। হামলার শিকারদের মধ্যে এক ব্যাটালিয়ন কমান্ডারও ছিলেন। ওই হামলাকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়িও ভাঙচুর করে এবং তাদের গাড়িচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে।”

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে ছয়জনকে আটক করা হয় এবং তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানানো হয়। আটক ব্যক্তিরা পশ্চিম তীরের কোনো বসতি এলাকার বাসিন্দা কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানায়নি এবং পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। তবে পুলিশও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

এ ঘটনার পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এক বিবৃতিতে বলেন, “আমি আইডিএফ সেনাদের ওপর সহিংস হামলার এই গুরুতর ঘটনাগুলোকে তীব্রভাবে নিন্দা জানাই। আমি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আহ্বান জানাচ্ছি, যেন তারা দ্রুত হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনে।”

এর আগে বুধবার কাফর মালিক গ্রামে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হন বলে জানায় ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরদিন বৃহস্পতিবার নিহতদের জানাজায় শত শত মানুষ অংশ নেয়।

ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্সে (আগের টুইটার) এক বিবৃতিতে ওই হামলার জন্য “সরকারি মদদ” থাকার অভিযোগ তোলে। বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসরায়েলি বাহিনী অ্যাম্বুল্যান্সকে আহতদের কাছে যেতে বাধা দেয় এবং সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের কয়েক ঘণ্টা গ্রামে প্রবেশ করতে দেয়নি। এর ফলে বসতি স্থাপনকারীদের লাগানো আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং ডজনখানেক বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়।”

এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তারা কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এক মুখপাত্র বলেন, “বুধবার ডজনখানেক ইসরায়েলি কাফর মালিকে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে আমাদের বাহিনী সেখানে যায়। সেখানে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয় এবং উভয়পক্ষই একে অপরের দিকে পাথর ছোড়ে।”

তিনি আরও জানান, “গ্রামের ভেতর থেকে কয়েকজন সন্ত্রাসী আমাদের বাহিনীর দিকে গুলি ছোড়ে ও পাথর নিক্ষেপ করে। জবাবে আমাদের বাহিনী গুলির উৎস ও পাথর নিক্ষেপকারীদের লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি চালায়।”

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, ওই ঘটনার পর পাঁচজন ইসরায়েলিকে আটক করা হয়। তবে ইসরায়েলি পত্রিকা হারেৎজ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাদের পরদিনই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কিছু বলা হয়নি।

আন্তর্জাতিক আইনে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতিগুলোকে অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০২২ সালে কট্টর ডানপন্থী দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠন করে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে এসব বসতি নির্মাণের গতি আরও বেড়েছে। এই শরিক দলগুলো সরাসরি পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে।

ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ বিশ্বের অনেক দেশ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতার তীব্র সমালোচনা করেছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করলে পশ্চিম তীরেও সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের হাতে ৯৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশির ভাগ যোদ্ধা হলেও অনেক বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন।

অন্যদিকে, ইসরায়েল বলছে, ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের হামলা বা সেনা অভিযানের সময় তাদের ৩৪ জন সেনা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।

Exit mobile version