Site icon আজকের কাগজ

কোটি টাকার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে খুলনার চুইঝাল

চুইঝাল

চুইঝাল—একদিকে জনপ্রিয় মসলা, অন্যদিকে ঔষধি গুণসম্পন্ন একটি মূল্যবান খাদ্য উপাদান। রান্নায় স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়াতে এই মসলার জুড়ি নেই। বিশেষ করে কোরবানির ঈদ এলেই এর চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ভোজনরসিকদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠা এই মসলা এখন কৃষকদের কাছেও লাভজনক অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ বাড়ায় দেশজুড়ে যেমন চাহিদা বাড়ছে, তেমনি কৃষক ও উদ্যোক্তারা বিদেশে রপ্তানিরও স্বপ্ন দেখছেন।

খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, বর্তমানে জেলায় প্রায় ৬০ হেক্টর জমিতে চুইঝালের চাষ হচ্ছে। প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন ৪.১৭ মেট্রিক টন। সেই হিসাবে খুলনায় বছরে প্রায় ২৫০ মেট্রিক টন চুইঝাল উৎপাদিত হয়। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলাই সবচেয়ে এগিয়ে—এখানে চুইঝালের চাষ হচ্ছে ২০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া পাইকগাছা উপজেলায় ৯ হেক্টর, বটিয়াঘাটায় ৮ হেক্টর, রূপসা ও ফুলতলায় ৫ হেক্টর করে জমিতে এই মসলার চাষ হচ্ছে।

পাইকারি বাজারে ভালো মানের প্রতি কেজি চুইঝালের দাম দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত, আর কম মানের চুই ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে একই চুই কেজিপ্রতি আরও ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, প্রতি কেজির গড় দাম ১,৩০০ টাকা ধরে হিসাব করলে দেশে বর্তমানে চুইঝালের বাজার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকার মতো।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল মিলে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৬০০ টন চুইঝাল উৎপাদিত হয়েছে। আগের বছর, অর্থাৎ ২০২৩-২৪ সালে উৎপাদন হয়েছিল ৫৫০ টন। প্রতিবছরই উৎপাদনের এই ধারা বাড়ছে।

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক জানান, “সারা বছরই চুইঝাল বিক্রি হয়। তবে ঈদ বা উৎসবের সময় চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এখন তো কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষ আমার চুইঝাল কিনছে। আগে যেখানে বছরে ২-৩ হাজার চারা বিক্রি হতো, এখন তা ৫০-৬০ হাজারে পৌঁছেছে।”

অন্য এক কৃষক নিউটন মণ্ডল জানান, “আমার তিন বিঘা জমিতে প্রতিবছর চুইঝাল চাষ করি। বছরে ২-৩ লাখ টাকার চুই বিক্রি হয়। শুধু শিকড় নয়, আমরা চারা ও গুঁড়াও বিক্রি করি। যাতে নষ্ট না হয়, তাই পাউডার করেও বিক্রি করছি। একবার আমরা এই চুই পাউডার থাইল্যান্ডেও পাঠিয়েছিলাম।”

তিনি আরও বলেন, “পাউডার সুস্বাদু হলেও যেই স্বাদ চিবিয়ে খাওয়ার চুইঝালে পাওয়া যায়, সেটা গুঁড়ায় পাওয়া যায় না। তবে পাউডারও আলাদা স্বাদের। যদি বিদেশে বাজার ধরতে পারি, তাহলে এর কদর আরও বহুগুণে বাড়বে।”

চুইঝালের অনলাইন বাজারও এখন বেশ জমজমাট। ‘উড়া’ নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে খুলনার চুইঝাল সরবরাহ করেন শরিফুল ইসলাম হিরণ। তিনি বলেন, “সারা দেশের ভোজনবিলাসীদের কাছে খুলনার চুইঝাল এখন পছন্দের শীর্ষে। কোরবানির ঈদে চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অর্ডার আসে, আমরা সরবরাহ করি।”

Exit mobile version