Saturday, July 19
Shadow

আরব আমিরাতের স্কুলে AI যুগে প্রবেশ করছে: অভিভাবকদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) খাতে বৈশ্বিক নেতৃত্বের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এরই অংশ হিসেবে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে আমিরাতের স্কুলগুলোতে (কেজি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত) নতুন এক যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে—স্কুল পাঠ্যক্রমে বাধ্যতামূলকভাবে যোগ হচ্ছে AI শিক্ষা। এতে থাকবে বেসিক ধারণা, ব্যবহারিক প্রয়োগ, এবং নৈতিকতা বিষয়ে সচেতনতা। চীনসহ বেশ কিছু উন্নত দেশের মতো আগেভাগেই AI শিখিয়ে শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে চায় আমিরাত।

এ সিদ্ধান্ত পিতামাতাদের জন্য যেমন এক আশাব্যঞ্জক সুযোগ, তেমনি নতুন এক চ্যালেঞ্জ। কারণ, অনেক অভিভাবকই আধুনিক প্রযুক্তির দৌড়ে অনেকটা পিছিয়ে আছেন। এখন প্রশ্ন উঠছে—এই প্রযুক্তিনির্ভর যুগে কীভাবে সন্তানদের পাশে দাঁড়াবেন তারা?

“স্মার্ট প্যারেন্টিং”-এর সময় এসেছে

দুবাইয়ে বসবাসরত দুই সন্তানের মা ও AI কনটেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট আবহা মালপানি নেস্মিথ বলেন, “চার বছর বয়স থেকেই AI শেখানো সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। আজকের শিশুদের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিনির্ভর। ওদের শুধু ব্যবহারকারী নয়, বরং দায়িত্বশীল ও সৃজনশীল রূপে গড়ে তোলার এখনই সময়।”

AI পাঠ্যক্রমে শুধুমাত্র কোডিং বা রোবোটিক্স নয়, বরং বাস্তবজীবনে AI-এর ব্যবহার ও নৈতিকতার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হবে। তাই পিতামাতাদেরও চাই মৌলিক ধারণা—যেমন: মেশিন লার্নিং, ডেটা প্রাইভেসি, এবং AI-র সামাজিক প্রভাব—যাতে তারা সন্তানের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা করতে পারেন।

পিতামাতার সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি

AI প্রশিক্ষক ও দুই সন্তানের মা ড. নাওমি টাইরেল বলেন, “শিশুরা অনেক সময় নতুন প্রযুক্তি আমাদের চেয়ে দ্রুত শেখে। এটা অভিভাবকদের জন্য শেখারও সুযোগ। নিরাপদ ও নৈতিক ব্যবহার নিয়ে সন্তানের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করা অত্যন্ত জরুরি। শুধু স্কুলের উপর নির্ভর করলে হবে না।”

তিনি আরও বলেন, “পিতামাতার উচিত সন্তানদের শেখার অগ্রগতি বোঝা, নিয়মিত প্রশ্ন করা—তারা কী শিখছে, কী নিয়ে আগ্রহী বা সমস্যায় পড়ছে। এতে সন্তান উৎসাহ পায় এবং শেখার প্রতি আগ্রহ বাড়ে।”

বয়স অনুযায়ী প্রস্তুতি জরুরি

একজন কেজি শিক্ষার্থী আর দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীর AI শেখার চাহিদা এক নয়। তাই বয়সভেদে অভিভাবকদের প্রস্তুত হওয়া দরকার। কোন স্তরে কী শেখানো হচ্ছে, তা জেনে পিতামাতারা বিদ্যালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে নিজেদের মতামত জানাতে পারেন।

বাস্তবজীবনের উদাহরণে শেখা সহজ হয়

AI পাঠ্যক্রমে থাকবে বাস্তব জীবনে AI-এর ব্যবহার—স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন, পরিবেশ সংরক্ষণ ইত্যাদি। ঘরে বসেই সন্তানকে শেখানো যেতে পারে কিভাবে স্মার্টফোন বা ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট AI ব্যবহার করে। AI টুল ব্যবহার করে শিশুদের সঙ্গে ছোটখাটো এক্সপেরিমেন্ট করেও শেখানো যায়।

ড. টাইরেল বলেন, “AI টুল কী পারে, আর কী পারে না—এটা বুঝলে শিশুদের প্রশ্নের উত্তর দিতে সহজ হয়।”

স্ক্রিন টাইম বনাম সময়ের সঠিক ব্যবহার

আবহা বলেন, “AI শেখানো মানেই বেশি স্ক্রিন টাইম নয়। বরং শেখার কৌশল ও কৌতূহল তৈরি করাই লক্ষ্য। বাইরে খেলা, পড়া, হাতে কাজ—সবকিছুর সঙ্গেই ভারসাম্য রাখতে হবে।”

তিনি বলেন, “স্ক্রিন টাইমকে ‘মূল্যবান’ করে তুলুন—যেমন: সমস্যা সমাধান, সৃজনশীল কাজ, নতুন কিছু শেখার মাধ্যম হিসেবে।”

সতর্ক থাকতে হবে অতিরিক্ত নির্ভরতা থেকে

ড. টাইরেল সতর্ক করেন, “AI আমাদের অনেক কাজ সহজ করে দিলেও এটি যদি অতিরিক্ত ব্যবহার হয়, তবে শিশুদের মৌলিক দক্ষতা কমে যেতে পারে।” তাই অফলাইন শিক্ষাকৌশল যেমন বই পড়া, হাতের লেখা চর্চা ও সামাজিক মেলামেশাও চালু রাখতে হবে।

ডিজিটাল লিটারেসি ও নৈতিকতা

শুধু প্রযুক্তি জানলেই হবে না, বরং অনলাইনে নিরাপদে চলাফেরা, ভুল তথ্য চেনা, তথ্য সুরক্ষা, এবং AI-এর পক্ষপাত নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি। পিতামাতাকে এইসব বিষয়ে নিয়মিত সন্তানের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যেতে হবে।

সঠিক EdTech বেছে নেওয়ার গুরুত্ব

বাজারে নানা রকম অ্যাপ আর অনলাইন টুল থাকায় বেছে নেওয়াটা কঠিন। তাই অভিভাবকরা শিক্ষক বা অন্যান্য পিতামাতার সঙ্গে পরামর্শ করে ভালো EdTech টুল বাছাই করতে পারেন।

উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের কিছু স্কুলে চালু হয়েছে AI-ভিত্তিক লেখালেখি সফটওয়্যার Writer’s Toolbox। এতে শিশুর বয়স নয়, বরং শেখার অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে তাৎক্ষণিক ফিডব্যাক দেওয়া হয়, যা আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। ড. ইয়ান হান্টার বলেন, “AI সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে শিক্ষকের কাজ সহজ হয়, আর শিক্ষার্থীর জন্য তৈরি হয় কাস্টমাইজড অভিজ্ঞতা।”

সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি

AI ও EdTech যন্ত্রপাতি শিশুর শিখন পদ্ধতি অনুযায়ী সাজিয়ে দিতে পারে। ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা থাকলেও তা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে স্পিচ রিকগনিশন, রিয়েল-টাইম অনুবাদ কিংবা সাবটাইটেল সুবিধা।

ভুল ধারণা দূর করা জরুরি

অনেকে ভাবেন, AI শিক্ষককে প্রতিস্থাপন করে দেবে, বা শিশুদের স্ক্রিননির্ভর করে তুলবে। তবে বাস্তবে AI ক্লাসরুমকে আরো কার্যকর করে তুলতে পারে। AI প্রযুক্তির মধ্যে এখন ডেটা সুরক্ষা, পক্ষপাত শনাক্তকরণ ও নৈতিক ব্যবস্থাও সংযোজিত হচ্ছে।

ড. টাইরেল বলেন, “সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে AI শিক্ষার গুণগত মান বাড়ায়। পিতামাতার উচিত সচেতন থেকে স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং সন্তানের শিক্ষাযাত্রায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করা।”

শেষ কথা

AI-এর যুগে শিশুদের প্রস্তুত করতে হলে শুধু স্কুলের উপর নির্ভর করলে হবে না, বরং পরিবারের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। শিশু যেন প্রযুক্তির ভেতর মানুষিকতা হারিয়ে না ফেলে, সেটাই স্মার্ট প্যারেন্টিং-এর মূল চ্যালেঞ্জ।

সূত্র: খালিজ টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *