Site icon আজকের কাগজ

ইরান-ইসরাইল উত্তেজনা : মধ্যপ্রাচ্যের বহু ফ্লাইট বাতিল, ছুটির পরিকল্পনা বাতিল করছে প্রবাসীরা

ফ্লাইট বাতিল

ইরান ও ইসরাইলের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রভাব পড়েছে আকাশপথে যোগাযোগে। সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে — বিশেষ করে ইরান, জর্ডান, লেবানন, ইসরাইলসহ বেশ কয়েকটি দেশের উদ্দেশ্যে চলাচলকারী বহু ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন বহু প্রবাসী, যারা আসন্ন গ্রীষ্মকালীন স্কুল ছুটির সময়টিতে ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন। ছুটি শুরু হচ্ছে জুলাইয়ের শুরুতে।

আবুধাবিতে বসবাসকারী ও জর্ডানের অধিবাসী ৪৪ বছর বয়সী গৃহিণী জানান, তার শ্বশুরের ভ্রমণ নিয়ে তারা চরম উদ্বেগে আছেন।
“আমার শ্বশুর আগামীকাল আম্মানে ফিরবেন বলে কথা ছিল। তার জর্ডানের রেসিডেন্সি ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৫ জুন। যদি তিনি তারিখের মধ্যে দেশে পৌঁছাতে না পারেন, তাহলে হয়তো আর ভিসা নবায়ন সম্ভব হবে না,” বলেন তিনি।

তার শ্বশুর একজন ফিলিস্তিনি, যিনি লেবাননের ডকুমেন্টেশনধারী হলেও, প্রয়াত জর্ডানিয়ান স্ত্রীর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে জর্ডানে রেসিডেন্ট হিসেবে বসবাস করছেন।
“আমরা খুবই চিন্তিত যে তিনি যদি কালকের ফ্লাইটে যেতে না পারেন, তাহলে কী হবে। আমরা অপেক্ষা করছি আমার স্বামী বিকেলে ফিরলে যেন এয়ারলাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি,” যোগ করেন ওলা।

এদিকে অনেকে জানাচ্ছেন, তারা বুঝতেই পারছেন না এই বিমানযাত্রা বিঘ্ন কতদিন চলবে।

৩১ বছর বয়সী কানাডার নাগরিক, ফিলিস্তিনি-জর্ডানিয়ান বংশোদ্ভূত সারা আহমাদ গত সপ্তাহে ঈদ উদযাপন করতে আম্মানে গেছেন। তিনি রোববার আবুধাবি ফিরতে চেয়েছিলেন।
“আমি এই সপ্তাহে কেবল ঈদের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য এসেছি। ফেরার টিকিট আছে ইতিহাদ এয়ারওয়েজে,” বলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মরত এই মার্কেটিং ম্যানেজার।

তিনি জানান, এখন পর্যন্ত তিনি এয়ারলাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি এবং কোনো ফ্লাইট আপডেটও পাননি।
“আশা করছি, ‘বার্তা নেই মানেই ভালো বার্তা’,” হেসে বলেন সারা।
তিনি আরও বলেন, “আমি পরিবারে বাড়িতে আছি, তাই কোথাও থাকার চিন্তা নেই। কিন্তু কাজ নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে। আমার ল্যাপটপ সঙ্গে নেই। দেখি কোনো বিকল্প ডিভাইসে রিমোটে কাজ করা যায় কিনা অথবা ছুটি বাড়াতে হয় কিনা।”

অনেক প্রবাসী জানাচ্ছেন, এই বাতিল হওয়া ফ্লাইট তাদের ছুটির সব পরিকল্পনা ওলটপালট করে দিয়েছে। বাচ্চারা হতাশ, পরিবারে দুশ্চিন্তা—সব মিলিয়ে এক ধরনের মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে।

দুবাইয়ে বসবাসরত ৪২ বছর বয়সী লেবানিজ নাগরিক সামির খুরির পরিবারও একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন। পেশায় তিনি লজিস্টিকস কর্মকর্তা।
“আমরা একেবারে তৈরি ছিলাম। আগামী সপ্তাহে আমাদের পরিবারসহ বৈরুত যাওয়ার কথা ছিল,” বলেন সামির।
“বাচ্চারা দাদাবাড়ি যেতে দারুণ উৎসাহী ছিল। গত গ্রীষ্মের পর আমরা আর লেবাননে যাইনি। এখন বুঝতে পারছি না কতদিন এই অচলাবস্থা চলবে।”
তিনি বলেন, “পুরো পরিবার এখন হতাশ ও দুশ্চিন্তায়। কী হবে, সেটাই জানি না। আমরা শুধু পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চেয়েছিলাম, বিশেষ করে ছুটির এই সময়ে।”

আরও কিছু প্রবাসীর জন্য এই বাতিল হওয়া ফ্লাইট মানে একেবারে হৃদয়ভাঙা ও অসহায় পরিস্থিতি, বিশেষ করে যারা অনেক দিন ধরে প্রিয়জনদের দেখেননি।

দুবাইয়ে বসবাসরত ৩৯ বছর বয়সী ইরানি সেলস এক্সিকিউটিভ আলি রেজা ১৪ জুন তেহরানে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, বৃদ্ধ মা-বাবাকে দেখতে। কিন্তু সপ্তাহের শুরুতেই তার ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়।
“আমি এক বছরের বেশি সময় ধরে পরিবারের কারও সঙ্গে দেখা করিনি। এই সফরের দিন গুনছিলাম,” বলেন আলি।
“এখন উত্তেজনা ও আকাশসীমা ব্যবস্থাপনার কারণে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। আমি বারবার এয়ারলাইনের ওয়েবসাইট রিফ্রেশ করছি, কিন্তু কোনো স্পষ্ট আপডেট নেই।”

সূত্র: খালিজ টাইম্‌স

Exit mobile version