Wednesday, June 11
Shadow

বিশ্বের সর্বোচ্চ মেট্রো স্টেশন বানাতে যাচ্ছে দুবাই: ভবিষ্যতের দিকে আরও এক ধাপ এগোল  

সংযুক্ত আরব আমিরাত এমন এক দেশ, যেখানে বিশ্বের ‘সবচেয়ে’র তালিকা দীর্ঘ—সবচেয়ে দ্রুত, সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে ধনী। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো আরও একটি গৌরবময় নাম—বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মেট্রো স্টেশন, যা তৈরি হচ্ছে দুবাইয়ের ব্লু লাইন মেট্রো নেটওয়ার্কে।

দুবাইয়ের শাসক এবং মেট্রোর ইতিহাসে একদম শুরু থেকেই যার সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে, তিনি সম্প্রতি নতুন এই নেটওয়ার্কের প্রথম স্টেশনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। এই স্টেশনের নাম ‘এমার প্রপার্টিজ স্টেশন’। নির্ধারিত হয়েছে এর যাত্রা শুরুর দিন—৯ সেপ্টেম্বর ২০২৯। সংখ্যার প্রতি দুবাইয়ের অনুরাগের অংশ হিসেবেই বেছে নেওয়া হয়েছে ‘৯’ তারিখটি।

স্টেশনটির নকশা এক কথায় ভবিষ্যতমুখী। স্টেশনের প্রবেশপথটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন সেটি একটি ‘ভবিষ্যতের দ্বার’। পুরো স্থাপনাটিই দুবাইয়ের ভবিষ্যতবান্ধব নগর পরিকল্পনার অংশ। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে—কে এই স্টেশনের ডিজাইনার?

সোমবার জানা যায়, এই অনন্য উচ্চতার মেট্রো স্টেশনটির নকশা করেছে বিশ্বখ্যাত মার্কিন স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান স্কিডমোর, ওউইংস & মেরিল (SOM), যাঁরা আগে তৈরি করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফা, নিউইয়র্কের অলিম্পিক টাওয়ার, এবং শিকাগোর বিখ্যাত সিয়ার্স টাওয়ার।

৭৪ মিটার (২৪২ ফুট) উচ্চতার এই স্টেশনটি তিনটি স্তরে নির্মিত, এবং এর প্রতিটি স্তরেই রয়েছে দৃষ্টিনন্দন নকশার ছোঁয়া। প্রথম দেখাতেই এর সুউচ্চ দেয়ালগুলো মনে করিয়ে দেয় আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন, তবে একেবারেই আর্থিক বাস্তবতায় দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। এর দেয়াল ও ছাদে ব্যবহার করা হয়েছে উষ্ণ, প্রাকৃতিক রঙ ও টেক্সচার। ছাদে থাকা কাঁচের প্যানেলগুলো দিয়ে সূর্যের আলো অনায়াসে প্রবেশ করে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ও লবিতে।

স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম যেন উঠে এসেছে দেওয়াল থেকে—অর্থাৎ মূল কাঠামোর অংশ হয়েই গড়ে উঠেছে এটি। যাত্রীরা একটি আধুনিক পেডেস্ট্রিয়ান ব্রিজের মাধ্যমে এই প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে পারবেন। নকশায় ব্যবহৃত হয়েছে প্রাকৃতিক পাথর ও ধাতব উপাদান, যেখানে দুবাইয়ের চিরচেনা ঐতিহ্য এবং আধুনিকতা পাশাপাশি স্থান পেয়েছে।

দেয়ালের প্যানেল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘জুরা লাইমস্টোন ব্রোঞ্জ মেটাল’, আর মেঝেতে থাকছে গ্রানাইট টাইলস।

২০২৪ সালের অক্টোবরে ব্লু লাইনের স্টেশন ডিজাইন প্রথমবারের মতো উন্মোচন করা হয়, যেখানে প্রদর্শিত হয়েছিল ট্র্যাকের উপর দিয়ে ধনুকের মতো বাঁকা একটি বিশাল ওভাল আকৃতির ছাদ। যা বর্তমান রেড ও গ্রিন লাইনের সম্পূর্ণ বদ্ধ স্টেশন ডিজাইনের চেয়ে ছিল একেবারেই আলাদা। তবে বর্তমানে গৃহীত চূড়ান্ত ডিজাইনে রয়েছে শক্তিশালী উঁচু দেয়ালবিশিষ্ট কাঠামো, যা একদিকে ভিন্নতা এনেছে, অন্যদিকে রেড ও গ্রিন লাইনের পরিচিত মেট্রো টার্মিনাল আর্কও বজায় রেখেছে।

এই স্টেশন হবে এক ধরনের ছোট্ট কমিউনিটি কেন্দ্রও—যেখানে থাকবে বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং পয়েন্ট, যাত্রী নামিয়ে দেওয়ার সুবিধা এবং পর্যাপ্ত পার্কিং স্পেস। পুরো এলাকা ঘেরা থাকবে সবুজ গাছপালায়।

প্রতিদিন ১,৬০,০০০ যাত্রী পরিবহন করার লক্ষ্যে ২০৪০ সালের মধ্যে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ট্রান্সপোর্ট হাব হয়ে উঠবে। তবে শুধু যাত্রী পরিবহন নয়, এই স্টেশন যেন নগরবাসীকে প্রতিদিন তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতের আরও এক ধাপ কাছাকাছি নিয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *