Site icon আজকের কাগজ

বোরোর নবান্ন উৎসব

বোরোর নবান্ন উৎসব

আসাদুজ্জামান খান মুকুল, নান্দাইল ময়মনসিংহ : বৈশাখ এলে বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় বোরো ধান মাড়াইয়ের উৎসব। আবহমান কাল ধরে বাংলার ঘরে ঘরে চলে এসেছে এই উৎসব। এই সময়টি যেন কৃষকের জীবনের সবচেয়ে প্রিয় সময়। কষ্ট, ঘাম, প্রতীক্ষা—সবকিছুর ফসল হলো এই বোরো ধান। তাই এই ধান মাড়াইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আনন্দ, উৎসব, আর গভীর এক শিকড়ের টান।

বোরো ধান মূলত শীতের শেষে এবং গ্রীষ্মের শুরুতে ঘরে ওঠে। জানুয়ারি থেকে রোপণ শুরু হয় এবং এপ্রিল-মে মাসে কাটার মৌসুম আসে। শুষ্ক মৌসুমে সেচনির্ভর এই ধানের জন্য কৃষকদের প্রস্তুতি শুরু হয় অনেক আগেই। জলসেচ, সার, বীজ আর খাটুনি—সব মিলিয়ে এটি এক বিশাল কর্মযজ্ঞ।

কিন্তু যখন সেই প্রতীক্ষার ফল মেলে, তখন কৃষকের ঘরে শুধু ধান নয়, আনন্দও ওঠে। ধান কাটা শুরু হয় দলবেঁধে। গ্রামে তখন উৎসবের আমেজ। গানের তালে তালে কাস্তে চালায় কৃষাণ। বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে এখনো বাউল বা ভাটিয়ালি গান বেজে ওঠে—‘ধান কাটি যাও রে ভাই, মাঠজুড়ে সোনা হইয়াছে’।

এই সময়ে গাও গেরামে বেড়ে যায়  আত্মীয়-স্বজনের আসা-যাওয়া। কেউ কেউ শহর থেকে ছুটে আসেন ধান কাটার আনন্দে শরিক হতে। বউ-ঝিরা পিঠে-পায়েস তৈরি করে অতিথি আপ্যায়ন করেন। কিছু কিছু অঞ্চলে এখনো ‘ধান কাটার নাচ’ বা ছোট মেলা হয়। বাচ্চারা মাঠে  ধানের ছড়া কুড়াতে ব্যস্ত থাকে আর বয়োজ্যেষ্ঠরা ধান কাটা ও মাড়াইয়ে মেতে ওঠেন।

বোরো ধান শুধু খাদ্য নয়, এটি কৃষকের জীবিকার উৎস। ধান বিক্রির টাকা দিয়ে সন্তানদের পড়ালেখা, খাদ্যের সংস্থান ও সংসারের সবকিছুর যোগান হয়। তাই বোরো ধান ঘরে ওঠা মানেই শুধু এক মৌসুমি ফসল নয়, এটি জীবনের ঘরে আশার আলো জ্বালায়।

আজকের যান্ত্রিকতা আর কৃষি প্রযুক্তির উন্নতির মধ্যেও এই উৎসবের প্রাণ এখনো টিকে আছে। যদিও যুগের তালে তালে অনেককিছুর পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তুু এই বোরো ধানের উৎসব বাংলার মাটির সঙ্গে, মানুষের প্রাণের সঙ্গে মিশে আছে ।এই উৎসবে বাংলার জীবনচিত্র দারুণভাবে প্রতিফলিত হয়।

Exit mobile version