Site icon আজকের কাগজ

নতুন গবেষণাঃ প্রাচীন মানুষের হাতের গঠন, ব্যবহার ও অভিযোজনের রহস্য

প্রাচীন মানুষের হাতের গঠন2

মানুষের হাত শুধু কাজ করার উপকরণ নয়, এটি আমাদের জীবনের ছাপও বহন করে। জীবনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড যেমন—গাছ বেয়ে ওঠা, কিছু শক্তভাবে ধরা বা হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা—এই প্রতিটি কাজ হাতের হাড়ের উপর ভিন্ন ভিন্ন চাপ সৃষ্টি করে। সেই চাপের প্রতিক্রিয়ায় আমাদের হাতের হাড়ের কিছু কিছু অংশ মোটা হয়ে যায়।

এই ধারণা থেকেই প্রাচীন মানুষের হাত কেমন ছিল এবং কীভাবে তারা হাত ব্যবহার করত তা বুঝতে বিজ্ঞানীরা ৩ডি স্ক্যানিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের আঙুলের হাড় বিশ্লেষণ করেন। এই গবেষণায় দক্ষিণ আফ্রিকার দুটি প্রাচীন মানব প্রজাতির জীবাশ্ম হাত নিয়ে কাজ করা হয়। এই প্রজাতিগুলো হলো অস্ট্রালোপিথেকাস সেডিবা (প্রায় ২০ লক্ষ বছর আগে) এবং হোমো নালেদি (প্রায় ৩ লক্ষ বছর আগে)।

গবেষণায় দেখা গেছে, এই দুই প্রাচীন মানব প্রজাতি হাত ব্যবহার করত দুইভাবে—একদিকে গাছ বেয়ে ওঠা বা উঁচু কোনো স্থানে পৌঁছানো, অন্যদিকে হাতের ব্যবহার ছিল বিভিন্ন বস্তু ধরা বা সরঞ্জাম তৈরি করার ক্ষেত্রে। আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টরির প্রত্নতত্ত্ববিদ সামার সাইদা বলেন, “তারা দুই পায়ে হাঁটত এবং হাত ব্যবহার করত জিনিসপত্র ধরতে বা তৈরি করতে, তবে একই সঙ্গে গাছ বা পাহাড়েও চড়ত।”

এই গবেষণার ফলাফল থেকে স্পষ্ট যে, মানব হাতের বিবর্তন সরলরৈখিকভাবে ‘বানর-সদৃশ’ থেকে ‘মানব-সদৃশ’ রূপে পরিবর্তিত হয়নি। স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের প্রত্নতত্ত্ববিদ রিক পটস, যিনি এই গবেষণায় সম্পৃক্ত ছিলেন না, বলেন, “এটা এমন নয় যে, হাতের ব্যবহার একদিনে পরিবর্তিত হয়েছে; এটা দীর্ঘ অভিযোজনের ফল।”

চ্যাথাম ইউনিভার্সিটির জীবাশ্ম গবেষক এরিন ম্যারি উইলিয়ামস-হাটালা বলেন, “হাত আমাদের চারপাশের পৃথিবীর সঙ্গে সংযোগের প্রধান উপায়।” তবে সম্পূর্ণ জীবাশ্ম হাতের নমুনা পাওয়া খুবই বিরল, তাই এই গবেষণায় পাওয়া নমুনাগুলো বিজ্ঞানীদের জন্য ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।

এই গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, যা মানব বিবর্তনের নতুন ধারা এবং প্রাচীন মানুষের জীবনযাপনের ওপর গুরুত্বপূর্ণ আলোকপাত করে।

Exit mobile version