সৈয়দ মুজিবুর রহমান দুলাল, লাকসাম : কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন এবং পৌরসভায় জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, দূষণমুক্ত পরিবেশ ও পানির প্রবাহ চলমান রাখতে এবং সম্ভাব্য বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে শনিবার (১৭ মে) পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হয়েছে।
ওইদিন সকালে উপজেলা প্রশাসন এবং পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় একযোগে মোট ৯টি খালে এই পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হয়।
লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাউছার হামিদ এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন। এ সময় তিনি বলেন, মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজে কেউ একা ভালো থাকতে পারে না। এক্ষেত্রে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও প্রয়াস। তিনি বলেন, সমাজে সুস্থতার সঙ্গে বেঁচে থাকতে হলে প্রয়োজন পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও দূষণমুক্ত পরিবেশ। সেজন্য অন্তত নিজের আঙ্গিনা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব।
উপজেলা ও পৌরসভার ৮ হাজার ৯০০ মিটার দৈর্ঘ্য ৯টি খালে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
খালগুলো হলো- গোবিন্দপুর ইউনিয়নে গোবিন্দপুর বাজার থেকে ডাকাতিয়া নদী পর্যন্ত, কান্দিরপাড় ইউনিয়নে আমুদা হতে ইরুয়াইন পর্যন্ত, বাকই (দক্ষিণ) ইউনিয়নে উধুইর খালের শুরু থেকে ফুলুয়া সেতু পর্যন্ত, মুদাফরগঞ্জ (দক্ষিণ) ইউনিয়নে জনার্দ্দনপুর হতে মাওলানা সাহেবের বাজার পর্যন্ত, মুদাফরগঞ্জ (উত্তর) ইউনিয়নে মুদাফরগঞ্জ বাজার হতে জগন্নাথপুর সেতু পর্যন্ত, লাকসাম (পূর্ব) ইউনিয়নে পূর্ব সাহেবপাড়া খাল, উত্তরদা ইউনিয়নে উত্তরদা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে বেরুল্লা খাল, আজগরা ইউনিয়নে আজগরা বাজার থেকে কালিয়াচৌঁ পর্যন্ত এবং লাকসাম পৌরসভার ফতেপুর খাল।
লাকসাম পৌরসভার ফতেপুর খাল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কাজে অংশগ্রহণ করেন ‘বিডিক্লিন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন।
সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা লাকসাম প্রেস ক্লাবের সদস্য মো. হামিদুল ইসলাম জানান, যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে বিডিক্লিন’র সদস্যরা সামাজিক ও বিবেকের দায়বোধ থেকে আন্তরিকতার সাথে স্বেচ্ছাব্রত মনোভাব নিয়ে মানবিক কাজে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।
এই ব্যাপারে লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাউছার হামিদ বলেন, আমাদের খালগুলো পরিস্কার এবং পানির প্রবাহ না থাকায় গত বছর সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় আমাদের অনেক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। আমরা অবচেতন মনে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে খাল-বিল, নদী-নালাগুলোসহ পরিবেশ দূষণ করছি। ফলে আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হতে হয়। তবে এগুলো মানব সৃষ্ট দুর্যোগ। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে সচেতনতার বিকল্প নেই।
তিনি জানান, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, দূষণমুক্ত পরিবেশ ও পানির প্রবাহ চলমান রাখতে এবং সম্ভাব্য বন্যার কবল থেকে রক্ষা ও সচেতনতার সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি খাল সংস্কার ও পরিস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, আমরা শুরু করছি, অন্যরা ঠিকই সম্পন্ন করবেন। সবাই সচেতন হলে পরিবেশে দূষণমুক্ত হবে। সমাজের উন্নয়ন ঘটবে।
ইউএনও বলেন, কোনোভাবেই খাল কিংম্বা নদী, দখল কিংম্বা দূষণ বরদাস্ত করা হবে না। যেই হোক না কেনো, জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেন তিনি।
লাকসামে ইউএনও’র ব্যতিক্রমী উদ্যোগ !
