ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে থাকা লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) – যা দুই দেশের মধ্যে একটি অস্থায়ী সীমানা হিসেবে পরিচিত – সেখানে জীবনযাপন করা যেন এক চিরস্থায়ী অনিশ্চয়তার মধ্যে বসবাস। এই সীমান্তজুড়ে প্রায়শই সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
পহলগাম হামলার পর নতুন উত্তেজনা
সম্প্রতি পহলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। দুই পক্ষই সীমান্তে গোলাগুলি চালিয়েছে, যার ফলে বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে এবং বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ভারতের পক্ষ থেকে ১৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে, অন্যদিকে পাকিস্তান জানিয়েছে তাদের ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। তবে এর মধ্যে কতজন গোলাগুলির কারণে নিহত হয়েছে তা নিশ্চিত নয়।
এলওসি: এক রক্তাক্ত সীমানা
ভারত ও পাকিস্তান প্রায় ৩,৩২৩ কিলোমিটার (২,০৬৪ মাইল) দীর্ঘ সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে, যার মধ্যে ৭৪০ কিলোমিটারজুড়ে রয়েছে লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি)। ১৯৪৯ সালে প্রথম ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর এটি ‘সিজফায়ার লাইন’ নামে পরিচিত ছিল, যা ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তির মাধ্যমে ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ নামকরণ করা হয়।
এই সীমান্ত পৃথিবীর অন্যতম সামরিকীকৃত এলাকা হিসেবে পরিচিত, যেখানে প্রায়শই সংঘর্ষ ঘটে এবং অস্ত্রের ঝনঝনানি শোনা যায়। শান্তি এখানে খুবই ক্ষণস্থায়ী এবং সামান্য উস্কানিতেই বড় ধরনের সংঘর্ষের রূপ নেয়।
সীমান্ত সংঘর্ষ ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ
এলওসি বরাবর সংঘর্ষ শুরু হলেই সাধারণ মানুষকে বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে হয়। স্থানীয়দের জীবিকা, পশুপালন এবং অবকাঠামো – সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্কুল, হাসপাতাল এবং বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যায়।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই সীমানা শুধু দুই দেশের দ্বন্দ্বের প্রতিচ্ছবিই নয়, বরং এখানকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের এক অমোচনীয় ক্ষতচিহ্ন।
শান্তি চুক্তি ও ভঙ্গুর অবস্থা
২০২১ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার ফলে সীমান্তে উত্তেজনা অনেকটাই কমে আসে। কিন্তু সাম্প্রতিক পহলগাম হামলার পর সেই শান্তি আবার ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়। ২০০১ সালে ৪১৩৪টি এবং ২০০২ সালে ৫৭৬৭টি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। ২০০৩ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর সংঘর্ষ কমে এলেও ২০০৮ সাল থেকে তা আবার বাড়তে থাকে।
ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
পহলগাম হামলার পর ভারত ইন্দাস জলচুক্তি স্থগিত করে, যা দুই দেশের মধ্যে এক বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তান পাল্টা শিমলা চুক্তি থেকে সরে আসার হুমকি দিয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমেই লাইন অব কন্ট্রোলের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের সীমান্ত সংঘর্ষ শুধুমাত্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে না; বরং স্থানীয় সামরিক পরিস্থিতি ও মেজাজও এর একটি বড় কারণ। এই সীমান্তে বসবাসকারীরা প্রতিনিয়ত অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটান, কখন কী হবে কেউ জানে না।
সূত্র: বিবিসি