Site icon আজকের কাগজ

চীনে ভেষজ চায়ে রোগীর উপকার, গ্রামেরও উন্নয়ন

চীনে ভেষজ চায়

কুয়াংসি ‍চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের লিউচৌ শহরে আছে ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা ক্লিনিক ফুওয়াং। সেখানে সম্প্রতি খোলা হয়েছে চায়ের দোকান। সে যে যেন তেন টি-স্টল হবে না, বোঝাই যাচ্ছে। তরুণ লি রংচিয়ে ওই চায়ের স্টলে তৈরি করছেন নানা ভেষজ চা। তার ভেষজের তালিকায় আছে হুয়াংচি গাছের শিকড়, গোজি বেরিও শুকনো জিনসেং।এসব দিয়ে তিনি তৈরি করছেন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং ভালো ঘুম আনার চা।

লি জানালেন, ‘চায়ের প্রতিটি ফর্মুলা চিকিৎসকদের দেওয়া, এবং এগুলো ধীরে ধীরে ফুটিয়ে তৈরি করতে হয়—ঘণ্টা খানেক সময় লাগে।’

এসব ভেষজ চা এখন শুধু স্বাস্থ্য উপকারেই সীমাবদ্ধ নেই; বরং চীনের গ্রামীণ অর্থনীতির স্বাস্থ্যটাও বেশ শক্তপোক্ত করছে। যেসব গ্রামে এসব ভেষজ উপাদান তৈরি হচ্ছে, সেখানে বাড়ছে কর্মসংস্থান, বাড়ছে আয় এবং পরিবেশ বান্ধব কৃষির নতুন ধারা।

চিকিৎসক থাং হুইথিয়ান প্রায় ৪০ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধ চর্চা করছেন। তিনি এখন কুয়াংসির তংলান কাউন্টির হংলি গ্রামের সঙ্গে কাজ করছেন যেখানে বড় পরিসরে চাষ হচ্ছে ‘মেডোরুকোরিডালিস’—প্রদাহ কমানোর জন্য বিখ্যাত ভেষজ উদ্ভিদ।এই জমিতে চালু হয়েছে ‘ওষুধি ফসল-ধান পালাক্রম চাষ’ পদ্ধতি। নভেম্বর মাসে রোপণ করা হয় ওষুধি চারা, মে মাসে তা কাটার পর জমিতে রোপণ করা হয় ধান।

স্থানীয় কৃষি বিশেষজ্ঞ ওয়েই চোংফু বলছেন, ‘এই মডেলেরফলে জমির ব্যবহার দ্বিগুণ বেড়েছে।’ওষুধিগাছের কারণে মাটিতে পুষ্টি জমা হয়,যা পরবর্তী ফসলের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে, ফলনও বাড়ায়।

তংলান প্রাকৃতিকভাবে একটি আদর্শ ভেষজ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এখানকার বন ভূমিরপরিমাণ ৮৬ শতাংশের  বেশি। উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়া ও সেলেনিয়াম-সমৃদ্ধ মাটির কারণে এখানে জন্মায় ৭৬৮টিরও বেশি প্রজাতির ভেষজ, যার মধ্যে রয়েছে বহু দামী ওষুধি উপাদান।

চীনের ২০২৩-২৫ সালের টিসিএম ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী তংলান ইতোমধ্যে চালু করেছে বিশেষ ত্রিমুখী কৌশল—পরিবেশ বান্ধব চাষ, আধুনিক প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং স্বাস্থ্য পর্যটন। এরজন্য দেওয়া হচ্ছে বিশেষ তহবিল,  প্রযুক্তিগত সহায়তাও পূর্ণাঙ্গ সরবরাহ চেইন।

এক সময় যেসব গ্রামের কৃষি-অর্থনীতিতে মৌসুমি ধানই ছিল ভরসা, এখন সেখানকার কৃষকরা ওষুধি গাছের চাষ করে সারা বছরই পাচ্ছেন বাড়তি রোজগার।

স্থানীয় নারী ওয়াংসিউইউ বলছেন, ‘আগে ধান কাটার পর হাতে কাজ থাকত না, এখন বছরে ১০-২০ হাজার ইউয়ান আয় হচ্ছে এই চাষ থেকে।’

চীনা গ্রামের মাঠে এখন শুধু ধান নয়, ফুটছে স্বাস্থ্য, সম্ভাবনা আর নতুন জীবনের আশা।

সূত্র: সিএমজি বাংলা

Exit mobile version