Site icon আজকের কাগজ

চীনে অটিজম সচেতনতা ও সহায়তা কার্যক্রম প্রসারিত

চীনের বিভিন্ন প্রদেশ অটিজম আক্রান্ত শিশুদের সহায়তার জন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ  উদ্যোগ। আর অটিজমের থেরাপিতে যুক্ত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সংগীত থেরাপি এবং বিনামূল্যে শিক্ষার মতো নানা কর্মসূচি। চীনের অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জীবনকে সহজ করে তুলতে বেশ কাজে আসছে এসব পদক্ষেপ।

অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার, একটি স্নায়বিক বিকাশজনিত সমস্যা যা সাধারণত শৈশবেই ধরা পড়ে। এটি মূলত সামাজিক যোগাযোগ, ভাষাগত দুর্বলতা, নির্দিষ্ট বিষয়ে সীমিত আগ্রহ ও অনমনীয় আচরণ হিসেবে প্রকাশ পায়।

চীনের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে একটি পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা চালু হয়েছে, যেখানে অটিজম নির্ণয়, পুনর্বাসন এবং শিক্ষার জন্য গড়ে তোলা হবে প্রাদেশিক নেটওয়ার্ক।

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় চিয়াংসু প্রদেশের প্রশাসন ৯টি শহরে বিশেষ স্কুল তৈরি করেছে, যেখানে অটিজম আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। প্রতি কাউন্টিতে অন্তত একটি বিশেষায়িত স্কুল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

ইনার মঙ্গোলিয়ার ছিফেং শহরে রেড ক্রস সোসাইটি একটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই চালিত রোবট শিশুদের সঙ্গে মিশছে এবং তাদের সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

ছিফেং সিটি রেড ক্রস সোসাইটির স্টাফ সদস্য চিন সিন জানান, ‘আমরা উন্নত এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জন্য কিছু প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম প্রদান করেছি।’

হাংচৌর ইয়াংলিংচি স্কুলটি পূর্ব চীনের চ্যচিয়াং প্রদেশের সবচেয়ে বড় মানসিক প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, সেখানে অটিজম আক্রান্ত কিশোররা এখন এআই ডেটা এনোটেটর হিসেবে কাজ করছে। তারা এআই কাজে লাগিয়ে প্রাচীন সিরামিক বিশ্লেষণ করছে।

হাংচৌ ইয়াংলিংচি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইয়ু লিনইয়া জানান, ‘অটিজম আক্রান্ত শিশুরাও এআই যুগে নিজেদের জায়গা খুঁজে নিতে পারে। প্রত্নবস্তু চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে আমরা এআই ও নান্দনিক শিক্ষা ধারণা চালু করেছি, যা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, সংবেদনশীলতা উন্নত করে এবং সৃজনশীলতায় উৎসাহ যোগায়।’

সম্প্রতি চিয়াংসুর রাজধানী নানচিংয়ে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসে একটি বিশেষ সিম্ফনি কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অটিজম আক্রান্ত শিশুরা পারফর্ম করে। তাদের মধ্যে ১১ বছর বয়সী চাং লিয়াংবোইয়ু রয়েছে। তিন বছর বয়সে তার অটিজম ধরা পড়ে। ২০২২ সাল থেকে সংগীত থেরাপির মাধ্যমে অনেক উন্নতি করেছে সে।

সংগীত থেরাপিস্ট চাং চিং জানালেন, ‘সুর, তাল ও সংগীতের মাধ্যমে আমরা শিশুদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, উদ্বেগ কমাতে পারি এবং তাদের সামাজিক দক্ষতা বাড়াতেও সাহায্য করতে পারি।’

চাং এখন স্কুলে স্বাভাবিকভাবে যাতায়াত করতে পারে এবং নিজে নিজে বাজার করতেও পারে।

চাং লিয়াংবোইয়ুর মা চাং লি বললেন, ‘সে গত বছরের তুলনায় অনেক ভালো করেছে। মঞ্চে গান গাইতে ও নাচতে দেখে আমার খুব আনন্দ হয়। এখন সে অনেক বন্ধু পেয়েছে।’

চীনের এই নতুন উদ্যোগগুলো যেমন অটিজম আক্রান্তদের আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করছে, তেমনি নিঃসন্দেহে সারা বিশ্বের অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জন্য খুলে দিয়েছে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার।

সূত্র: https://www.facebook.com/CMGbangla

Exit mobile version