দুই ফ্রন্টে চাপে ভারত, দক্ষিণ এশিয়ায় অশান্তির শঙ্কা
কাশ্মীরের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যখন সম্পর্কের টানাপোড়েন চরমে, তখন কৌশলগতভাবে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াল চীন। রোববার (২৭ এপ্রিল) পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক ডারের সঙ্গে ফোনালাপে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই স্পষ্টভাবে জানান, সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টায় চীন পাকিস্তানের দৃঢ় অবস্থানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করছে। পাশাপাশি পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় বেইজিংয়ের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
চীনের এই প্রকাশ্য সমর্থন শুধু রাজনৈতিক নয়; বরং তা ভূরাজনৈতিক শক্তির ভারসাম্যে একটি নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ওয়াং ই বলেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই সব দেশের যৌথ দায়িত্ব। পাকিস্তানের ন্যায়সঙ্গত নিরাপত্তা উদ্বেগ চীন পুরোপুরি বুঝে এবং তার পাশে থাকবে।” একইসঙ্গে তিনি দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানকে সংযম প্রদর্শন এবং সংলাপে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানান।
ফোনালাপে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক ডার জানান, তার দেশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং পেহেলগাম হামলার ঘটনায় নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তে প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান এই সংকটময় সময়ে চীন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখবে এবং পরিস্থিতি পরিণতভাবে মোকাবিলা করবে।
চীনের সরাসরি সমর্থন: দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন উত্তেজনার পূর্বাভাস?
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারত-পাকিস্তান বিরোধের সময় চীনের এমন খোলামেলা পাকিস্তানপ্রীতি আঞ্চলিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। সিন্ধু পানি চুক্তি বাতিলের ইঙ্গিত এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সামরিক তৎপরতার মধ্যেই চীনের সমর্থন পাকিস্তানকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। একই সঙ্গে ভারতকে পশ্চিমে পাকিস্তান এবং উত্তরে চীনের দ্বিমুখী চাপে পড়তে হবে, যা ভারতের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক যদি শুধু কূটনৈতিক স্তরে সীমাবদ্ধ না থেকে যৌথ সামরিক মহড়া, গোয়েন্দা বিনিময় কিংবা সীমান্তে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পর্যন্ত গড়ায়, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে।
চীন-পাকিস্তানের এই ‘অল-ওয়েদার স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ’ এমন এক সময় শক্তিশালী হচ্ছে, যখন ভারত নিজেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বড় শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। চীনের এমন পদক্ষেপ ভারতের আঞ্চলিক প্রভাবকেও সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছে বলে বিশ্লেষণ করছেন কূটনৈতিক মহল।
সামনের দিনগুলোতে কী হতে পারে?
বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ সংলাপের সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বরং ভারতের কূটনৈতিক ও সামরিক প্রস্তুতি আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানও চীনের সমর্থনে আক্রমণাত্মক অবস্থান নিতে পারে। সব মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়া আবারও একটি অনিশ্চিত, উত্তেজনাপূর্ণ সময়ের মুখোমুখি হতে চলেছে।