মাঠের ধান আর ভুট্টা ছেড়ে এখন তারা কীবোর্ডে শব্দ ট্যাগ করেন। অডিওকে রূপান্তর করেন টেক্সটে, মুখভঙ্গির ব্যাখ্যা করেন কম্পিউটারে। উত্তর-পশ্চিম চীনের শায়ানসি প্রদেশের ৪৬ বছরের ওয়াং মেইমেই এখন একজন এআই-ট্রেনার। নতুন নতুন তথ্য দিয়ে সমৃদ্ধ করে চলেছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ডাটাবেজ।
একসময় মেইমেইর জীবন চলতো কৃষিতে। মাঠে ঝরাতে হতো ঘাম। সেই ওয়াং এখন সকালে চলে যান ইয়িচুন কাউন্টির অফিসে। এআইকে তথ্য ফিড করাই এখন তার নতুন পেশা।
ওয়াং বলেন, ‘এআইকে এসব শেখাই যাতে ওর উত্তরগুলো আরও নিখুঁত হয়।’
লোয়েস মালভূমির থোংছুয়ান শহরে বেড়ে ওঠা ওয়াংয়ের ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল—একদিন যেন তাকে আর বাসি পাউরুটি খেতে না হয়। পরিবারের আয়ের উৎস ছিল মাত্র ২ হেক্টর জমির ফসল। মাধ্যমিকের পর পড়া বন্ধ করে মাঠে কাজ শুরু করেন ওয়াং মেইমেই।
কিন্তু কৃষি যন্ত্রায়নের উন্নতির ফলে হাতে সময় আসে। সেই সময়কে কাজে লাগিয়েই নতুন কিছু করতে চাইলেন ওয়াং।
২০২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, এক বন্ধুর পরামর্শে ইন্টারভিউ দিতে যান আইতু টেকনোলজির অফিসে। তখন এআই কী জানতেন না।
আইতৌ-এর প্রধান চাং রুই বলেন, ‘অনেকেই ইন্টারভিউতে কেঁদে ফেলতেন। কারণ তারা লিফটও চালাতে জানতো না। কিন্তু আমি জানতাম, একটু প্রশিক্ষণ পেলেই তারা অনেক দূর যেতে পারবে।’
আজ সেই কোম্পানিতে ২৪০ জন বা ৭০ শতাংশ কর্মীই গ্রামীণ নারী। সবাই সার্টিফায়েড এআই প্রশিক্ষক। আয় করছেন গড়ে ৪ হাজার ইউয়ান করে।
এআই ওয়াংকে শুধু চাকরি নয়, আত্মমর্যাদাও দিয়েছে। এমনকি, এখন তিনি এআই ব্যবহার করে জানতে পারেন ভুট্টার মাঠে কী রোগ হলো এবং কীভাবে সেটা সারাবেন।
নার্সারির শিক্ষক ছিলেন মা শুয়াইশুয়াই। এখন ড্রাইভারলেস প্রযুক্তি, আর্থিক খাতের ফিনটেকসহ নানা ক্ষেত্রে এআই ব্যবহারে দক্ষ তিনি।
চাং রুই বলেন, ‘শুরুতে অনেকেই স্যান্ডেল পরে অফিসে আসতেন। এখন তারা ব্যবসায়িক পোশাক পরে আসেন। আত্মবিশ্বাসটাই বদলে গেছে।’
ইয়িচুনের মতো ছোট কাউন্টিতে ৭২ হাজার মানুষের বাস। সেখানে এখন এক হাজারেরও বেশি মানুষ এআই সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, চীন সরকার এআই উদ্ভাবনে গতি আনতে বিস্তৃত ব্যবস্থা নিয়েছে, যার লক্ষ্য নতুন শিল্পায়ন এবং শিল্প খাতের উন্নয়নকে সমর্থন করা। চীনের এআই গবেষকদের সংখ্যা ২০১৫ সালে ১০ হাজারেরও কম ছিল, যা ২০২৪ সালে ৫২ হাজার ছাড়িয়েছে।
ওয়াং বললেন, ‘এআই এখন এত দ্রুত এগোচ্ছে যে, আমাকেও শিখে চলতে হবে। পিছিয়ে পড়লে চলবে না।’
সূত্র: সিএমজি বাংলা