সাগরপাড়ের ক্যাফেতে বিমান হামলায় সাংবাদিকসহ নিহত ৩৯, আল-আকসা হাসপাতালে হামলায় আহত বহু
দখলদার ইসরাইলি বাহিনী গাজায় একাধিক স্থানে বিমান হামলা চালিয়ে অন্তত ৯৫ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। সোমবার (১ জুলাই) চালানো এসব হামলার মধ্যে রয়েছে একটি ক্যাফে, একটি স্কুল ও খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র। এছাড়া, একটি হাসপাতালের ওপরও হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী, যেখানে বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
সর্বশেষ এই হামলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ছিল গাজা শহরের উত্তরে সাগরতীরে অবস্থিত আল-বা’কা ক্যাফেতে চালানো বিমান হামলা। এতে অন্তত ৩৯ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইসমাইল আবু হাতাব। এছাড়াও, ক্যাফেতে জড়ো হওয়া নারী ও শিশুরাও নিহতদের মধ্যে রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ইয়াহিয়া শরীফ বলেন,
“আমরা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া মরদেহের অংশ কুড়িয়ে আনছি। এই জায়গাটির কোনো রাজনৈতিক বা সামরিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এখানে শুধু একটি জন্মদিনের আয়োজন চলছিল।”
আল জাজিরার গাজা শহর প্রতিনিধি হানি মাহমুদ জানিয়েছেন,
“কোনো ধরনের পূর্ব-সতর্কতা ছাড়াই এই হামলা চালানো হয়। এই স্থানটি ছিল যুদ্ধাহত ও বাস্তুচ্যুত মানুষদের স্বস্তির জায়গা। রক্তের দাগ এখনো সেখানে লেগে আছে। এতটাই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ছিল যে অনেক মৃতদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে।”
একই দিনে ইসরাইলি বাহিনী গাজার ইয়াফা স্কুলেও হামলা চালায়। ওই স্কুলটিতে শত শত বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। হামাদ আবু জারাদেহ নামের এক ব্যক্তি জানান,
“আমরা মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে এলাকা ছাড়ার হুমকি পেয়েছিলাম। তারপরই সেখানে হামলা হয়।”
এছাড়া, মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ অঞ্চলের আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের আঙিনায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী, যেখানে হাজারো বাস্তুচ্যুত পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। হামলার সময়কার দৃশ্য নিয়ে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়—হাসপাতালের আঙিনায় থাকা তাঁবুগুলোতে বিস্ফোরণের পর মানুষজন ছুটে পালাচ্ছে।
আল জাজিরার অপর প্রতিনিধি তারেক আবু আজজুম বলেন,
“এই বিস্ফোরণের আগে কোনো সতর্কতা ছিল না। হামলার স্থানটি আমাদের সম্প্রচারের মাত্র ১০ মিটার দূরে। এটা প্রথম নয়—ইসরাইলি বাহিনী এই হাসপাতাল প্রায় ১০ বার টার্গেট করেছে। এতে দুর্বল হাসপাতাল ব্যবস্থার ওপর আরও বোঝা পড়ছে।”
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এই হামলাকে “ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি পদ্ধতিগত অপরাধ” বলে অভিহিত করেছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়,
“দখলদার বাহিনীর যুদ্ধবিমান আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের চত্বরে স্থাপিত বাস্তুচ্যুতদের তাবুতে বোমা নিক্ষেপ করে। এতে আহত হয়েছেন অনেকেই এবং হাসপাতালের ভেতর ও আশপাশে থাকা রোগীদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে।”
প্রসঙ্গত, গত ২২ মাসের গাজা যুদ্ধের সময় ইসরাইল বহুবার হাসপাতালগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। মানবাধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘ-সমর্থিত পর্যবেক্ষকদের অভিযোগ, ইসরাইল পরিকল্পিতভাবে গাজার স্বাস্থ্যখাতকে ধ্বংস করছে।
সূত্র: আল জাজিরা