বাংলাদেশ ফুটবলে যেন আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। এই জোয়ারের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ইংলিশ ক্লাব লেস্টার সিটির মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী। তার আগমনে বদলে যেতে শুরু করেছে দেশের ফুটবলের দৃশ্যপট। ফলে জাতীয় দলের হয়ে প্রথমবার দেশের মাঠে খেলতে নামা এই ফুটবলারকে এক নজর দেখতে আজ ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।
দর্শকদের হতাশ করেননি হামজা। জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক ম্যাচেই দুর্দান্ত এক গোল করে নিজেকে জানান দেন। তার এই গোলেই ভুটানের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জয়ের পথ প্রশস্ত হয়। বাংলাদেশের অপর গোলটি করেন সোহেল রানা।
প্রায় ৫৫ মাস পর ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে ফিরেছে আন্তর্জাতিক ফুটবল। আর সেই প্রত্যাবর্তনের ম্যাচেই যেন উৎসবের আমেজ। ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক বাংলাদেশ গোল পেতে সময় নেয় মাত্র ৬ মিনিট। এ গোল আসে দুই প্রবাসী তারকা জামাল ভূঁইয়া ও হামজা চৌধুরীর চমৎকার বোঝাপড়ার ফলে।
বাঁ দিক থেকে জামালের নেওয়া কর্নার কিক থেকে দুর্দান্ত এক হেডে গোলটি করেন হামজা। এই গোলের মাধ্যমে নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই আন্তর্জাতিক গোলের খাতা খুললেন তিনি। আর সেই সঙ্গে পুরো স্টেডিয়ামে গর্জে ওঠে— “বাংলাদেশ, বাংলাদেশ!” এই স্লোগান যেন পুরো ম্যাচজুড়েই দর্শকদের কণ্ঠে বেজেছে।
২৯তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর দারুণ সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বক্সের মধ্যে থেকে ফাহমিদুলের নেওয়া বাঁ পায়ের শটটি রুখে দেন ভুটানের গোলরক্ষক জিয়েলশেন জাংপো। ফিরতি বলে শট নিয়েছিলেন অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও, তবে তা অনেক বাইরে চলে যায়।
৩৫তম মিনিটে ভুটানের গোলরক্ষক আরও একটি নিশ্চিত গোল ঠেকিয়ে দেন। সতীর্থ তাজউদ্দিনের পাঠানো ক্রস থেকে জামাল বল পেয়ে যান ফাঁকায়। কিন্তু তার নেওয়া শটটি অসাধারণ দক্ষতায় প্রতিহত করেন জাংপো। ফলে প্রথমার্ধে আর কোনো গোল না হলে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয়ার্ধে ৪৯তম মিনিটেই গ্যালারিতে আনন্দ ছড়িয়ে দেন মিডফিল্ডার সোহেল রানা। বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের দুর্দান্ত শটে বল জালে পাঠান তিনি। তার শট ঠেকানোর কোনো উপায় ছিল না ভুটান গোলরক্ষক জাংপোর। বল যখন জালে প্রবেশ করে, তখন শুধু ডানদিকে ঝাঁপ দিয়েই ক্ষান্ত থাকতে হয় তাকে।
৭৩তম মিনিটে গোল ব্যবধান কমানোর একটি বড় সুযোগ পায় ভুটান। প্রায় মাঝমাঠ থেকে নেওয়া এক শট কর্নারের বদৌলতে রক্ষা করেন বাংলাদেশের তরুণ গোলরক্ষক মিতুল মারমা। ৭৭তম মিনিটেও বাংলাদেশের গা ছমছমে মুহূর্ত আসে, যখন ইয়েশি জিয়েলশনের হেড অল্পের জন্য বারের ওপর দিয়ে চলে যায়।
ম্যাচের শেষ দিকে আবারো নজরকাড়া সেভ দেন ভুটানের গোলরক্ষক জাংপো। ৯০তম মিনিটে ডি বক্সের অনেক বাইরে থেকে নেওয়া মোহাম্মদ ইব্রাহিমের শট বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে রুখে দেন তিনি।
অন্যদিকে, যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে অবিশ্বাস্য এক সেভ করেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিতুল। ডান প্রান্তে ফাঁকায় বল পান ভুটানের জিগমে নামগিয়াল। সামনে কেবল মিতুলকে পেয়েই শট নেন তিনি। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে বল রুখে দেন মিতুল। এটাই ছিল ম্যাচের শেষ উত্তেজনাকর মুহূর্ত।
শেষ পর্যন্ত আর কোনো গোল না হলে ২-০ ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে জামাল ভূঁইয়া বলেছিলেন, তারা ভুটানের কাছে আগের হারটার বদলা নিতে চান। আজকের এই জয় যেন সেই প্রতিজ্ঞারই বাস্তবায়ন।