Site icon আজকের কাগজ

বিজ্ঞান ও কল্পনার সেতুবন্ধন গড়ল শাংহাই বিজ্ঞান উৎসব

শাংহাই বিজ্ঞান উৎসব

‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জীবনকে করে আরও উন্নত’—এই স্লোগানকে সামনে রেখে ১৭ মে থেকে শুরু হয়েছে ২০২৫ শাংহাই বিজ্ঞান উৎসব। দুই সপ্তাহব্যাপী এই আয়োজন চলবে ৩০ মে পর্যন্ত, যাতে শহরের ১৬টি জেলার প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে থাকবে প্রায় দুই হাজার বৈজ্ঞানিক অনুষ্ঠান।

এ উৎসবে থাকছে চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রায় দুই হাজার প্রদর্শনী, কর্মশালা ও ফোরাম। এতে অংশ নিয়েছে চীনের ৫০টি বড় গবেষণাগার ও সায়েন্স ফ্যাসিলিটি। এবারের উৎসবের আরেকটি আকর্ষণ হলো, এ আয়োজনে চীনের ৪৮টি বিজ্ঞান শিক্ষা কেন্দ্র তাদের শিক্ষার্থী ভর্তিতে দিয়েছে বিশেষ ছাড়।

উৎসবের প্রধান লক্ষ্য নতুন প্রজন্ম—তরুণ শিক্ষার্থী ও কিশোর-কিশোরীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলা। শহরজুড়ে আয়োজন করা হয়েছে প্রদর্শনী, কর্মশালা, বিজ্ঞান বক্তৃতা, উদ্ভাবন প্রতিযোগিতা ও ইন্টারঅ্যাকটিভ টেক এক্সপেরিয়েন্স।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো রোবট ও মানুষ একসঙ্গে হেঁটেছে লাল গালিচায়। এক্সটেনডেড রিয়েলিটি বা এক্সআর প্রযুক্তি আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত হিউম্যানয়েড রোবটের উপস্থিতি ছিল মূল আকর্ষণ।

পুরো মেলায় প্রতিফলিত হচ্ছে চীনের দ্রুত বিকাশমান রোবোটিক্স শিল্পের অগ্রগতি।

উৎসব চলাকালীন শহরের ৫৬টি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগার ও বৈজ্ঞানিক সুবিধা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে ‘শাংহাই কি ল্যাবরেটরি অব ইন্টেলিজেন্স ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড রোবোটিক্স’ এবং ‘ন্যাশনাল ফ্যাসিলিটি ফর প্রোটিন সায়েন্স।’

চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেস-এর শাংহাই ইনস্টিটিউট অব টেকনিক্যাল ফিজিক্স-এ চলছে ব্যতিক্রমধর্মী কর্মশালা—পানির রকেট, ছাং’ই চন্দ্রযান থিমে প্রতিযোগিতা এবং মানবদেহের গতিবিধি শনাক্তকারী বুদ্ধিমান সেন্সর তৈরির ডেমো।

শিশুদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রিক লাইভ সেশন। সেখানে তারা সরাসরি জানতে পারছে মহাকাশে ধান ও জেব্রাফিশ চাষ কেমন করে হয়।

অনুষ্ঠানে চীনের ডক্টরাল প্রার্থী চিয়া ছাওসিয়ান জানালেন, ‘আমরা যে দুটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালিয়েছি তা হল মহাকাশে ধান এবং জেব্রাফিশ চাষ। আমরা এই দুটি পরীক্ষার জন্য ‘মহাকাশ বক্তৃতা’ খুলেছি, যা শিশুদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। আমরা তাদের কাছে ডিভাইসটির নকশা নীতি এবং এর কার্যকারিতা নীতিও পরিচয় করিয়ে দিয়েছি।’

জানা গেল এ প্রদর্শনীতে কেবল চোখ ধাঁধানো আবিষ্কারই নয়, নানা প্রান্তের বিজ্ঞানীরা শোনাবেন তাদের গবেষণার গল্পটাও। সেই সঙ্গে তরুণ শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করতে চীনের ৪৮টি বিজ্ঞান শিক্ষা কেন্দ্র ভর্তিতে অফার দিয়েছে বিশেষ ছাড়।

শাংহাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান হুয়াং হং জানালেন, ‘এই বছরের উৎসবের দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে। একটি হলো বিজ্ঞানীদের মনোবলকে উৎসাহিত করা। এর জন্য আমরা এখানে শিক্ষাবিদদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি তাদের গবেষণার গল্প বলার জন্য। অন্যটি হলো তরুণদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনাকে উৎসাহিত করা। আমরা তাদের প্রশ্ন সংগ্রহ এবং পরীক্ষাগার খোলার মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে অন্বেষণ এবং চিন্তাভাবনা করতে উৎসাহিত করি।’

১৯৯১ সালে শুরু হওয়া এই বিজ্ঞান উৎসব ছিল চীনের প্রথম সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত বিজ্ঞানমেলা। দিনে দিনে এটি বিজ্ঞান ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরিতে এক অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

সূত্র: সিএমজি

Exit mobile version