Tuesday, May 13
Shadow

সরবে নয়, নীরবে চলছে কুমিল্লায় চাঁদাবাজির নতুন খেলা

কুমিল্লা বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি: ক্ষমতার পালাবদল, কিন্তু চাঁদাবাজির রীতি অটুট

কুমিল্লা মহানগরীর জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনাল। শহরের বেশির ভাগ বাস এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেড়ে যায়। আট মাস আগেও এই বাস টার্মিনাল থেকে কোটি টাকা চাঁদা আদায় করতেন সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ‘কুমিল্লার ত্রাসখ্যাত’ আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের ঘনিষ্ঠরা। বর্তমানে বাহার অধ্যায়ের অবসান ঘটলেও, টার্মিনালে চাঁদাবাজি থেমে নেই। তবে এবার সেই চাঁদাবাজি চলছে নীরবে।

৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাবাহিনীর তৎপরতায় কুমিল্লার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলালেও, জাঙ্গালিয়া টার্মিনালে ‘ভাই’ নামধারী অদৃশ্য ব্যক্তির নামে নিয়মিত চাঁদা আদায় অব্যাহত রয়েছে। বাসচালক ও সহকারীদের কাছ থেকে ১০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। নাম জিজ্ঞাসা করলে কেউ বলতে পারে না কে এই ‘ভাই’।

টার্মিনালের নতুন বাস্তবতা

সম্প্রতি কুমিল্লা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতাদের পরিবর্তে এখন অদৃশ্য কিছু ব্যক্তির নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের নামেও কিছু এলাকায় টাকা চাওয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে বিএনপি নেতারা এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত কাউকে পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, কাজল নামে এক ব্যক্তি প্রতিদিন বাসপ্রতি ৩০ টাকা করে আদায় করেন। রাত হলে এই অঙ্ক আরও বেড়ে যায়। টার্মিনালের নির্ধারিত বাসের বাইরে কোনো বাস হলে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। কাজল ছাড়াও আরও কয়েকজন এই চাঁদা সংগ্রহ করেন। বাসচালকরা জানান, আগে আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে চাঁদা দিতে হতো। এখন শুধু বলা হয় ‘ভাই’ এর জন্য দিতে হবে।

নির্মাণ খাতেও চাঁদাবাজি

কুমিল্লা শহরে ভবন নির্মাণ সামগ্রী বিক্রির নামেও চলছে চাঁদাবাজি। স্থানীয় কিছু ব্যক্তি বিএনপির নাম ব্যবহার করে টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভবন নির্মাণ খাতে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ রেখেছে চাঁদাবাজরা। ইট, বালি, সিমেন্ট, পাইলিংসহ সবকিছু নির্দিষ্ট দোকান থেকে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এসব দোকানের সঙ্গে চাঁদাবাজদের কমিশন চুক্তি রয়েছে।

অটোরিকশা চালকদের স্বস্তি

সরকার পরিবর্তনের পর সবচেয়ে বেশি স্বস্তিতে রয়েছেন কুমিল্লার সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকরা। আগে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। মাসে টোকেন নবায়ন বাবদ দিতে হতো ৩০০ টাকা। ৫ আগস্টের পর এই খাত থেকে চাঁদা আদায় একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। কান্দিরপাড় সিএনজিস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, আগে যেখানে প্রতিদিন টাকা দিতে হতো, এখন সেখানে কেউ এসে চাঁদা দাবি করে না।

অটোরিকশা চালক ইদ্রিস হোসেন বলেন, ‘আগে কত রকমের নেতা দেখতাম। ৫ তারিখের পর সব ভাইগা গেছে।’ পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকাতেও একই চিত্র দেখা গেছে। চালক আবদুর রশীদ বলেন, ‘এডি এহন ঘরে নাই।’ সাধারণ মানুষ এখন কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছেন।

বিএনপি’অবস্থান

চাঁদাবাজির বিষয়ে কুমিল্লা মহানগর বিএনপি’র সভাপতি উদবাতুল বারী আবু মানবজমিনকে বলেন, ‘এসব যারা করছে, আপনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন সবাই নেশাখোর, টোকাই। দলের কেউ নয়। দলের কারও বিরুদ্ধে স্পেসিফিক অভিযোগও নেই। আমরা দলীয় প্রধানের নির্দেশে জিরো টলারেন্স অবস্থানে আছি। দলের কাউকে যদি চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সরকার পরিবর্তনের পরেও কুমিল্লায় চাঁদাবাজি থেমে নেই। ক্ষমতার পালাবদল হলেও বদলায়নি চাঁদাবাজির রীতি। এখন শুধুই বদলেছে নাম, বদলেছে পন্থা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *