Site icon আজকের কাগজ

সিনেমার সংকট, ওটিটির উত্থান: বিনোদনের নতুন বাস্তবতা

সিনেমার সংকট ওটিটির উত্থান

ওটিটি (ওভার দ্য টপ) বিনোদনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে। এই প্ল্যাটফর্মের উত্থানে বদলেছে বিনোদনের ধারা, তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনা। নাটক, সিরিজ, এমনকি সিনেমাও এখন ওটিটি মাধ্যমে নির্মিত হচ্ছে, যা দর্শকের হাতের মুঠোফোনেই সহজলভ্য। ফলে বিনোদনের পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনি প্রসারিত হয়েছে শিল্পীদের কাজের সুযোগও।

বর্তমানে বাংলাদেশে ডজনখানেক ওটিটি প্ল্যাটফর্ম সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে ‘চরকি’, ‘বঙ্গ বিডি’, ‘বিঞ্জ’, ‘বায়োস্কোপ’, ‘সিনেম্যাটিক’, ‘আই স্ক্রিন’, ‘দীপ্ত প্লে’, ‘বাংলাফ্লিক্স’, ‘টফি’, ‘টেলিফ্লিক্স’, ‘সিনেস্পট’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ‘নেটফ্লিক্স’, ‘অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও’, ‘হইচই’, ‘আড্ডা টাইমস’, ‘ডিজনি প্লাস হটস্টার’ সহ বেশ কয়েকটি বিদেশি প্ল্যাটফর্মও বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

করোনাকালীন সময়ে ঘরবন্দী মানুষের জন্য ওটিটি ছিল বিনোদনের বড় উৎস। ধীরে ধীরে এটি সাধারণ দর্শকের অভ্যাসে পরিণত হয়। শুধু দর্শক নয়, এই প্ল্যাটফর্মের কারণে নাটক ও সিরিজ নির্মাণেও এসেছে বৈচিত্র্য। ‘তাকদীর’, ‘মহানগর’, ‘গুটি’, ‘আমি কী তুমি’, ‘মারকিউলিস’, ‘ফ্রাইডে’, ‘কুহেলিকা’—এমন অনেক সিরিজ দর্শকের মন জয় করেছে। তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, বেশিরভাগ ওটিটি কনটেন্টে অভিনয় করছেন নাট্যশিল্পীরা এবং নির্মাণ করছেন নাটক ও বিজ্ঞাপন জগতের পরিচিত মুখ।

এক সময় যে ঢাকাই সিনেমা ছিল দেশের প্রধান বিনোদনের উৎস, সেই ইন্ডাস্ট্রিতে এখন চলছে হতাশার প্রহর। নব্বই দশকের শেষ দিক থেকেই কমতে থাকে সিনেমার সংখ্যা। বর্তমানে সিনেমা নির্মাণ প্রায় ঈদকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। এফডিসিকেন্দ্রিক নির্মাতা ও শিল্পীরা কাজের সংকটে আছেন। আর যেসব সিনেমা নির্মিত হচ্ছে, তার বেশিরভাগই হচ্ছে মৌসুমী নির্মাতাদের হাত ধরে।

অন্যদিকে, টেলিভিশন নাটকের নির্মাতা ও শিল্পীরা ঝুঁকছেন ওটিটির দিকে। এ সুযোগে বাংলাদেশ এখন দেশের বাইরেও কনটেন্টের বাজার তৈরির চেষ্টা করছে এবং ইতিমধ্যেই কিছু সাফল্যও এসেছে। তবে এই জোয়ারে ঢাকাই সিনেমার নিয়মিত শিল্পীরা অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।

অনেকে অভিযোগ করছেন, ওটিটি কনটেন্টে সিনেমার পরিচিত মুখগুলোকে তেমন একটা দেখা যায় না। নির্মাতারাও তাদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী নন। মূল কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, একজন সিনেমার নায়ক বা নায়িকার পারিশ্রমিক দিয়ে একটি ওয়েব সিরিজের অর্ধেক কাজ শেষ করা সম্ভব। পাশাপাশি, এফডিসিকেন্দ্রিক অনেক শিল্পী ও নির্মাতা এখনও ওটিটিকে পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারেননি। তাদের মতে, ওটিটি কখনও সিনেমার বিকল্প হতে পারে না।

ভিন্নমত ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

তবে, ওটিটি নিয়ে সবার মত এক নয়। কেউ কেউ একে আশীর্বাদ মনে করছেন, আবার অনেকের মতে এটি নাটকের মান কমিয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে ফ্রি ভার্সনের কনটেন্টে মানের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে, পেইড ভার্সনের সিরিজ ও সিনেমাগুলোতে মানের কিছুটা উন্নতি দেখা গেলেও টিভি নাটকের ঐতিহ্য অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ইঙ্গিত দেয় যে, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিনোদনের মাধ্যমেও এসেছে পরিবর্তন। এই পরিবর্তনকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশীয় কনটেন্ট আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিযোগিতা করতে পারবে, এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Exit mobile version