চীনের চিকিৎসকরা সফলভাবে একটি ৭ বছর বয়সী শিশুর দেহে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট এবং হালকা কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করেছেন, যা ম্যাগনেটিক লেভিটেশন প্রযুক্তিতে চলে। এই যন্ত্রের ফলে শিশুটির দেহে আসল হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের জন্য আরও সময় পাওয়া গেছে।
ছোট্ট হৃদয়যন্ত্রটির ওজন মাত্র ৪৫ গ্রাম এবং ব্যাস ২.৯ সেন্টিমিটার—যা একটি প্লাস্টিকের পানির বোতলের ঢাকনার মতোই ছোট। এটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তৈরি সবচেয়ে ছোট ম্যাগলেভ পাম্পের চেয়েও প্রায় অর্ধেক ওজনের।
চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে হুয়াচং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অন্তর্ভুক্ত তোংচি মেডিকেল কলেজের ইউনিয়ন হাসপাতাল মঙ্গলবার জানায়, গত ৩০ মার্চ অস্ত্রোপচারের পর শিশুটি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে এবং পরবর্তী চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছে।
চীনের শানতোং প্রদেশের এই শিশু গত মে মাসে একটি জটিল হৃদরোগ ডাইলেটেড কার্ডিওমায়োপ্যাথিতে আক্রান্ত হয়। এর একমাত্র চিকিৎসা হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন।
চিকিৎসার জন্য গত মাসে যখন তাকে উহানের হাসপাতালে আনা হয়, তখন শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। জরুরি ভিত্তিতে ১৯ মার্চ তাকে ইসিএমও মেশিনে নেওয়া হয়—যা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে। তবে তার বিরল রক্তের গ্রুপ এবং দাতা না থাকায় তৎক্ষণাৎ হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন সম্ভব ছিল না।
শিশুটির পরিবারের সম্মতির পর, হাসপাতালের কার্ডিওভাসকুলার সার্জারির প্রধান তোং নিয়ানকুও এবং তার টিম সিদ্ধান্ত নেন কৃত্রিম হৃদয় প্রতিস্থাপনের—যা তাকে বাঁচিয়ে রাখবে এবং হার্ট ডোনারের জন্য সময় এনে দেবে।
যন্ত্রটি তৈরি হয় ২০২১ সালে হাসপাতাল এবং শেনচেনের একটি উদ্ভাবনী চিকিৎসা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের যৌথ গবেষণায়। চীন ও বিদেশের প্রায় ২০টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণাটি চলছে।
চীনের আবিষ্কৃত এই হৃৎপিণ্ড-পাম্পে রয়েছে—দীর্ঘ ব্যাটারি ব্যাকআপ, জরুরি রোগী পরিবহনে স্থিতিশীলতা, সুনির্দিষ্ট গতিনিয়ন্ত্রণ, রোগীর রক্তসঞ্চালনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর সুবিধা।
অস্ত্রোপচারটি প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলে। পরদিন শিশুটি স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে সক্ষম হয় এবং তিন দিনের মাথায় তাকে পুনর্বাসনের জন্য আলাদা ওয়ার্ডে নেওয়া হয়।
এটি ওই হাসপাতালে দ্বিতীয় শিশুর দেহে এমন কৃত্রিম হৃদয় প্রতিস্থাপন। প্রথম শিশুটি ছিল ১০ বছরের, যাকে ২০২৪ সালের শেষ দিকে এই যন্ত্রটি প্রতিস্থাপন করা হয়। সেও সুস্থ রয়েছে।
সরকারি তথ্যানুযায়ী, প্রতি বছর চীনে প্রায় ৪০ হাজার শিশু হৃদযন্ত্র বিকলের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে ৭ থেকে ১০ শতাংশ শিশুর জরুরি ভিত্তিতে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন প্রয়োজন।
সূত্র: সিএমজি বাংলা