আজকের কাগজ

যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিশ্চিয়ান স্কুলে নারী শিক্ষার্থীর গুলিতে নিহত ২

যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের একটি বেসরকারি ক্রিশ্চিয়ান স্কুলে এক নারী শিক্ষার্থী গুলি চালিয়ে একজন শিক্ষক ও এক কিশোর শিক্ষার্থীকে হত্যা করেছেন। হামলায় ছয়জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ম্যাডিসন পুলিশ প্রধান শন বার্নস সোমবার রাতে জানান, ১৫ বছর বয়সী এক নারী শিক্ষার্থী স্কুলে হামলা চালান। হামলার পর ওই শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

প্রধান ঘটনার বিবরণ
পুলিশ জানায়, হামলাকারী অ্যাবানডেন্ট লাইফ ক্রিশ্চিয়ান স্কুলের একজন শিক্ষার্থী ছিলেন এবং ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ১১টার দিকে (১৭:০০ জিএমটি) স্কুলে গুলি চালানোর খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

পুলিশ প্রধান জানান, প্রথম দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জরুরি অবস্থার কল দিয়ে স্কুলে বন্দুকধারীর তথ্য জানায়। তিনি বলেন, “আজকের দিনটি শুধু ম্যাডিসনের জন্য নয়, পুরো দেশের জন্যই একটি দুঃখের দিন। আমাদের কমিউনিটিতে আরও ভালোভাবে কাজ করতে হবে।”

পুলিশ জানায়, গুলি চালানোর মোটিভ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে হামলাকারীর পরিবারের সদস্যরা তদন্তে সহযোগিতা করছেন। কীভাবে ওই শিক্ষার্থী আগ্নেয়াস্ত্র হাতে পেয়েছিলেন, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।


হামলাকারী ও ঘটনার বিশ্লেষণ

পুলিশ প্রধান শন বার্নস জানান, হামলাকারীর নাম নাটালি রুপনো, যিনি “সামান্থা” নামেও পরিচিত। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি স্ব-প্রবৃত্ত গুলির মাধ্যমে আত্মহত্যা করেছেন। মৃতদেহের আনুষ্ঠানিক কারণ ডেন কাউন্টির মেডিকেল এক্সামিনার অটপসি শেষে প্রকাশ করবে।

তিনি আরও জানান, এই শিক্ষার্থীর সঙ্গে পুলিশের আগে কোনো সম্পর্ক বা আগের কোনো ঘটনা ছিল না। গুলি চালানোর সময় ঘটনাটি স্কুলের একটি স্টাডি হলে ঘটে, যেখানে বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিল।


স্কুলের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

স্কুলের সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক বারবারা উইয়ার্স বলেন, চলতি বছরের শুরুতে স্কুলে অ্যাকটিভ শুটার ট্রেনিং করা হয়েছিল। তিনি বলেন, “এই প্রশিক্ষণের তথ্য আমাদের শিক্ষকদের কাছে খুবই টাটকা ছিল, যা সোমবার কাজে লেগেছে।”

বারবারা উইয়ার্স, যিনি হামলার সময় ক্লাসে পড়াচ্ছিলেন, বলেন, “শিক্ষার্থীরা চমৎকারভাবে নিজেদের সামলেছে। তারা ভীত ছিল, কিন্তু যখন ‘লকডাউন, লকডাউন’ শব্দটি শোনে, তারা বুঝতে পেরেছিল এটি বাস্তব।”

স্কুলটিতে একটি স্বয়ংক্রিয় লক সিস্টেম রয়েছে, যেখানে প্রধান প্রবেশপথে অনুমতি ছাড়া কেউ ঢুকতে পারে না। তবে স্কুলে কোনও বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা নেই।


আহতদের অবস্থা ও পুলিশি তদন্ত

পুলিশ জানায়, হামলার সময় কেউ গুলি চালায়নি। তারা ঘটনাস্থলে হ্যান্ডগান উদ্ধার করেছে। আহত ছয়জনের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর কিন্তু স্থিতিশীল। বাকি চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যাদের মধ্যে দুইজনকে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলতে আহ্বান জানিয়েছে। তবে পুলিশ প্রধান বার্নস বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদে জোর দিচ্ছি না। তাদের সময় দিলে তারা যা দেখেছে, তা আমাদের জানাবে।”

তিনি আরও বলেন, “এই ভবনের প্রতিটি শিশু ও ব্যক্তি এই ঘটনার শিকার এবং তারা চিরকাল শিকার হয়ে থাকবে।”


বড় পরিসরে সাড়া

ঘটনাস্থলে দ্রুত সাড়া দিতে ১৫টি অ্যাম্বুলেন্সসহ বিশাল সংখ্যক জরুরি সেবাদানকারী সংস্থা উপস্থিত হয়। এফবিআই এবং অন্যান্য ফেডারেল এবং স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

ম্যাডিসন ফায়ার চিফ ক্রিস কার্বন বলেন, “আমাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে মাত্র তিন মাইল দূরে এই ঘটনাটি ঘটায় পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পেরেছে।”


প্রতিক্রিয়া ও প্রার্থনা

প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী নিয়ে গঠিত অ্যাবানডেন্ট লাইফ ক্রিশ্চিয়ান স্কুল একটি ফেসবুক পোস্টে জানায়, “অনুগ্রহ করে আমাদের পরিবারের জন্য প্রার্থনা করুন।” পোস্টটি দেশব্যাপী ব্যাপক সহানুভূতি ও সমর্থন পেয়েছে।

উইসকনসিন গভর্নর টনি এভার্স পরিস্থিতির প্রতি নজর রাখছেন এবং সবার জন্য প্রার্থনা করছেন। তিনি স্টেট ভবনগুলোতে পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেন, “এই ঘটনা বিস্ময়কর ও অগ্রহণযোগ্য। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা শেখার কথা, বন্দুক হামলা থেকে বাঁচতে শিখতে নয়।” তিনি কংগ্রেসকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।


যুক্তরাষ্ট্রে স্কুল শুটিং-এর পরিসংখ্যান

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতা একটি সাধারণ ঘটনা এবং স্কুলগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়।

স্কুলে নারী বন্দুকধারীর হামলা খুবই বিরল। গবেষক ডেভিড রিডম্যানের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৯ সাল থেকে অন্তত চারটি পরিকল্পিত স্কুল হামলা নারী হামলাকারীদের দ্বারা হয়েছে।


“এটি আমাদের শহরের জন্য একটি কঠিন দিন,” বলেন ম্যাডিসন পুলিশ প্রধান। “এই দিনটি ম্যাডিসনের মানুষের স্মৃতিতে চিরকাল রয়ে যাবে।”

Exit mobile version